ন্যায়পরায়ণতা মানুষের শ্রেষ্ঠতম গুণ। এর মাধ্যমেই সমাজে মানুষের যথাযথ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। যে জাতির মাঝে ন্যায়ের সৌরভ আছে, তারা সৌভাগ্যবান এবং উন্নতির সর্বোচ্চ চূড়ায় উন্নীত। মানব জাতির শ্রেষ্ঠ শিক্ষক মহানবী (সা.) তাঁর অনুসারীদের ন্যায়ের শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর জীবনই ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে উৎসর্গিত।
ন্যায়বিচারকারীর মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, সুবিচারক লোক আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁর ডান হাতের দিকে নূরের মিম্বরে উপবিষ্ট থাকবেন। যাঁরা তাঁদের বিচারকার্যে, পরিবারে ও দায়িত্বভুক্ত বিষয়ে ইনসাফ রক্ষা করেন। (সুনানে নাসায়ি: ৫৩৭৯)
এভাবেই নবীজি বিভিন্ন কথায় সাহাবায়ে কেরামের অন্তরে ন্যায়পরায়ণতার বীজ বপন করেছেন। নবুওতপ্রাপ্তির আগেই তিনি অত্যাচারিতের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে মক্কায় আবদুল্লাহ ইবনে জুদআনের বাড়িতে কুরাইশের চিন্তাশীল যুবকদের নিয়ে ‘হিলফুল ফুজুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। কাবা পুনর্নির্মাণের সময় ‘হাজরে আসওয়াদ’ স্থাপন নিয়ে কুরাইশদের মধ্যে সৃষ্ট সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসনে সর্বসম্মতিক্রমে নবী (সা.)-এর বিচার ও ন্যায়পরায়ণতার ওপর আস্থা রাখা হয়েছিল।
নবুওতপ্রাপ্তির পর তিনি সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, চুরির দায়ে অভিযুক্ত এক নারীকে ক্ষমা করে দেওয়া প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘হে লোকজন, নিশ্চয়ই তোমাদের আগের লোকেরা গোমরাহ হয়ে গিয়েছে।
কারণ কোনো সম্মানী ব্যক্তি যখন চুরি করত, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন কোনো দুর্বল লোক চুরি করত, তখন তার ওপর শরিয়তের বিধান বাস্তবায়ন করত। আল্লাহর কসম, মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করে, তবে অবশ্যই মুহাম্মদ তাঁর হাত কেটে দেবে।’ (বুখারি: ৬৭৮৮)
রাসুল (সা.) তাঁর দীর্ঘ জীবনে ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়েছেন। একবার এক মুনাফিক তাঁর ন্যায়পরায়ণতায় কলঙ্কলেপনের চেষ্টা করেছিল। তখন নবী (সা.) অত্যন্ত দৃঢ়তা ও প্রতাপের সঙ্গে সেই কথা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) জিরানা নামক স্থানে গনিমতের মাল ও সোনা-রুপা বণ্টন করছিলেন। এগুলো বিলাল (রা.)-এর কোলে ছিল। এক ব্যক্তি বলল, ‘মুহাম্মদ, ইনসাফ করুন। কেননা, আপনি ইনসাফ করছেন না।’
তিনি বললেন, ‘তোমার জন্য দুঃখ হয়, আমিই যদি ইনসাফ না করি, তবে আমার পরে কে ইনসাফ করবে?’ ওমর (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে ছেড়ে দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দিই।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘তার সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি দলের উদ্ভব হবে, যারা কোরআন পড়বে, তবে তা তাদের কণ্ঠনালি অতিক্রম করবে না। তারা এমনভাবে ধর্মচ্যুত হবে, যেমন ধনুক থেকে তির শিকারের দিকে দ্রুত ছুটে যায়।’ (ইবনে মাজাহ: ১৭২)
লেখক: মুহাদ্দিস ও খতিব, টঙ্গী, গাজীপুর