যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ দাবি করেছেন, ক্যারিবীয় সাগরে তথাকথিত মাদকবাহী নৌকায় সাম্প্রতিক সামরিক হামলায় অবৈধভাবে ‘সব মানুষকে মেরে ফেলতে’ নির্দেশ দিয়েছিলেন—এমন অভিযোগ ‘মনগড়া খবর’। তিনি বলেছেন, এ ধরনের নৌকায় ধারাবাহিকভাবে চালানো হামলাগুলো ‘যুক্তরাষ্ট্রের ও আন্তর্জাতিক আইন—দুইয়ের সঙ্গেই অসংগতিপূর্ণ।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, হেগসেথ অভিযোগ করেছেন—তাঁর বিরুদ্ধে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো আসলে ‘মনগড়া, উসকানিমূলক এবং আমাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে লড়াই করা অসাধারণ যোদ্ধাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে রচিত কুৎসা-কাহিনি।’
তিনি এই মন্তব্য করলেন মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের পর। পত্রিকাটি দাবি করেছে, হেগসেথ নাকি গত ২ সেপ্টেম্বর বিশ্লেষকদের নজরদারিতে থাকা এক নৌকার যাত্রীদের ‘যে যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায়, সবাইকে মেরে ফেলতে’ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসন গত কয়েক মাসে যে বহু হামলা চালিয়েছে, সেটিই ছিল প্রথম আক্রমণ। হোয়াইট হাউস পরে প্রমাণ ছাড়াই জানায়, ক্যারিবীয় অঞ্চলে নৌকায় থাকা যাদের হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই মাদক চোরাকারবারি।
ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর দুই সিনেটর—রিপাবলিকান রজার উইকার এবং ডেমোক্র্যাট জ্যাক রিড এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, সিনেটের সেনাবাহিনী বিষয়ক কমিটি এসব নৌকা হামলার তদন্ত শুরু করবে। বিবৃতিতে তাঁরা লেখেন, ‘কমিটি সাম্প্রতিক কিছু সংবাদ প্রতিবেদন এবং প্রতিরক্ষা দপ্তরের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবগত। দক্ষিণ কমান্ডের আওতায় সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকায় পরবর্তী পর্যায়ের হামলার অভিযোগের বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। আমরা প্রতিরক্ষা দপ্তরের কাছে অনুসন্ধান পাঠিয়েছি। ঘটনাগুলোর প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি উদ্ঘাটনে কঠোর তদারকি চালানো হবে।’
ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ২ সেপ্টেম্বরের সেই অভিযানে নেতৃত্ব দেয় এলিট সিল টিম-৬। প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নৌকাটি বিধ্বস্ত হয় এবং দুজন লোক ধ্বংসাবশেষ ধরে ভেসে বেঁচে ছিলেন। এরপর বিশেষ অভিযান বাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল ফ্র্যাঙ্ক এম মিচ ব্র্যাডলি নাকি দ্বিতীয় হামলার আদেশ দেন, যাতে ওই দুজন বেঁচে থাকা মানুষকেও হত্যা করা হয়—হেগসেথের নির্দেশ মেনে।
বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ক্যারিবীয় অঞ্চলজুড়ে এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আইনসম্মত কি না, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়েছে। এ পর্যন্ত অন্তত ২২টি নৌকার ওপর আক্রমণে ৮০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।