বিশ্বের সবচেয়ে ধনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২৫ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়টির তহবিল প্রায় ৪০০ কোটি ডলার বেড়ে ৫৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের গবেষণা তহবিল কমানোর চাপের মধ্যেও বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ রিটার্ন এই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা হার্ভার্ড ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি (এইচএমসি) জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে (২০২৫ সালের ৩০ জুনের পর থেকে) এখন পর্যন্ত তারা ১১ দশমিক ৯ শতাংশ আয় করেছে। এটি হার্ভার্ডের স্বাভাবিক লক্ষ্য ৮ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। এর আগের বছর (২০২৪ অর্থবছর) বিশ্ববিদ্যালয়টির তহবিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে মোট ৫৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়টি জানিয়েছে, চলতি বছর তারা প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে রেকর্ড ৬০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান পেয়েছে। কোনো শর্ত ছাড়াই এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে যুক্ত হয়েছে।
এদিকে, তহবিল বৃদ্ধির এই খবর এল এমন সময়ে, যখন হার্ভার্ড ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, গাজায় যুদ্ধ চলাকালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদি-বিরোধিতা উসকে দিয়েছে। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এটি আসলে ট্রাম্পের একটি বৃহত্তর প্রচারণার অংশ, যার লক্ষ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বামঘেঁষা মনোভাব দমন করা।
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে চলা এ বিতর্কটি এখন আদালতে গড়িয়েছে। এতে ট্রাম্প প্রশাসনের গবেষণা তহবিল কমানো এবং বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি সীমিত করার পদক্ষেপও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ট্রাম্প প্রশাসনের এসব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়ছে।
এইচএমসির প্রধান নির্বাহী এন পি নারভেকার এক চিঠিতে জানিয়েছেন, হার্ভার্ডের তহবিলের ৪১ শতাংশ প্রাইভেট ইকুইটি শেয়ারভিত্তিক বিনিয়োগে, ৩১ শতাংশ হেজ ফান্ডে, এবং ১৪ শতাংশ পাবলিক ইকুইটিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
নারভেকার বলেন, ‘যদিও পাবলিক ইকুইটির তুলনায় প্রাইভেট বিনিয়োগ কম থাকায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে, তবুও দক্ষ বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে ভালো ফল পাওয়া গেছে।’
আইভি লিগভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিনিয়োগ ও রিটার্ন সব সময়ই আলোচনায় থাকে। কারণ, তারা প্রথম থেকেই হেজ ফান্ড ও প্রাইভেট ইকুইটি ব্যবহারের পথিকৃৎ। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপোড়েনে তাদের কর্মকাণ্ড এখন আরও বেশি নজরদারিতে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বলেন, ‘আমরা অনিশ্চয়তা এবং আয়ের উৎসে হুমকির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছি।’ তবে তিনি সরাসরি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করেননি।