সম্প্রতি আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত সংঘাতে অন্তত কয়েক ডজন সেনা নিহত হয়েছে। ২০২১ সালে তালেবান কাবুলের ক্ষমতা দখলের পর এটাই দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত। দক্ষিণ এশিয়ার এই নতুন উত্তেজনা নজরে এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তিনি বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন।
যাত্রা শুরুর আগে এয়ারফোর্স ওয়ানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত সম্পর্কে অবহিত করা হয়। এ সময় তিনি বলেন, ‘শুনেছি, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে এখন যুদ্ধ চলছে। আমি মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফিরে এসে দেখব কী হচ্ছে। জানেনই তো, আমি আরেকটা যুদ্ধ বন্ধ করতে যাচ্ছি।’
আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে কী ঘটেছিল?
গত শনিবার গভীর রাতে আফগান তালেবান বাহিনী ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার (১,৬০০ মাইল) দীর্ঘ আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সামরিক চৌকিতে হামলা চালায়। পাকিস্তানও পাল্টা গোলাবর্ষণ ও ড্রোন হামলা চালায়। বন্দুক, কামান ও ড্রোনের লড়াই চলে গতকাল রোববার ভোর পর্যন্ত। পরে বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। পাকিস্তানের দাবি, তাদের ২৩ জন সেনা নিহত হয়েছেন আর তালেবানের দাবি, তাদের ৯ যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছেন—তবে উভয় পক্ষই পরস্পরের ওপর আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ তুলেছে।
সংঘর্ষের কারণ কী?
পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, গত সপ্তাহে পাকিস্তান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিমান হামলা চালায়। তাদের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানি তালেবানের (টিটিপি) প্রধান। তিনি নিহত হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। তালেবান জানায়, তাদের শনিবারের হামলা ছিল আফগান আকাশসীমা লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়া।
পাকিস্তানি তালেবান কারা?
২০০৭ সালে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পশতু জাতিগোষ্ঠীর কয়েকটি জঙ্গিগোষ্ঠী একত্র হয়ে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) গঠন করে। আফগান তালেবান থেকে অনুপ্রাণিত হলেও তারা ছিল আরও উগ্রপন্থী ও আল-কায়েদার ভাবধারায় পরিচালিত।
পরে তারা বাজার, মসজিদ, বিমানবন্দর, সেনাঘাঁটি, থানা—সব জায়গায় হামলা চালায় এবং পাকিস্তানের ভেতরে বড় এলাকা দখল করে নেয়। এমনকি সোয়াত উপত্যকাতেও, যেখানে পরে কিশোরী মালালা ইউসুফজাইকে গুলি করে আহত করা হয়।
২০১৪ সালে টিটিপি পেশোয়ারের একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে ১৩০ জনের বেশি শিশু হত্যা করে, যা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ব্যাপক সামরিক অভিযানে যেতে বাধ্য করে। এতে টিটিপির অনেক সদস্য আফগানিস্তানে পালিয়ে যান।