রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত কাঠামো চূড়ান্ত করতে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবার ফ্লোরিডায় বৈঠকে বসেছেন মার্কো রুবিও, স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনারসহ শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা। সামরিক ও রাজনৈতিক চাপে থাকা কিয়েভের জন্য এই আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রোববার (৩০ নভেম্বর) বৈঠকের আগে ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের প্রধান রুস্তম উমেরোভ এক্স মাধ্যমে বৈঠকের ছবি প্রকাশ করে জানান—আলোচনার মূল লক্ষ্য ন্যায়সংগত শান্তির পথে অগ্রগতি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে তৈরি করা ট্রাম্পের ২৮ দফা খসড়া পরিকল্পনার সংশোধন নিয়েই মূলত বৈঠক এগোচ্ছে। এই খসড়াটি রাশিয়ার দাবির দিকে অতিমাত্রায় ঝুঁকে ছিল বলে সমালোচনা হয়েছে।
ফ্লোরিডায় আলোচনার শুরুতেই ইউক্রেনকে আশ্বস্ত করে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রুবিও বলেছেন—শুধু যুদ্ধ শেষ করাই নয়, বরং এমন সমাপ্তি প্রয়োজন যা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) ইউক্রেনজুড়ে সর্বশেষ রুশ হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কিয়েভের উপকণ্ঠে ড্রোন হামলায় একজন নিহত হন। একই সময়ে কৃষ্ণ সাগরে দুটি রুশ তেলবাহী ট্যাংকারে হামলার দায় স্বীকার করেছে ইউক্রেন।
তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের অবসান টানতে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২৮ দফা পরিকল্পনার পর সংশোধিত একটি নতুন খসড়া তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর সুনির্দিষ্ট বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি। প্রথম খসড়ায় দনবাস অঞ্চলকে রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়া, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার সীমিত করা এবং ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার মতো প্রস্তাব ছিল। তবে এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে আপত্তি জানায় ইউক্রেন ও তার মিত্র ইউরোপীয় দেশগুলো। ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা স্পষ্ট করে দেন—দখল হয়ে যাওয়া অঞ্চল রাশিয়ার হয়ে যাবে, এমন স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
এদিকে ইউক্রেন সরকারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির প্রধান সহকারী অ্যান্ড্রি ইয়ারমাক পদত্যাগ করেছেন। যুদ্ধ পরিস্থিতিও এখন খুব কঠিন। রুশ বাহিনী ধীরে হলেও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে, শীতের শুরুতেই ইউক্রেনের ভেতরে চরম বিদ্যুৎবিভ্রাট শুরু হয়েছে, আর অবিরাম হামলা তো আছেই।
তারপরও জেলেনস্কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি দেশের সঙ্গে কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। ব্রিটেনে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ও সাবেক সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুঝনি সতর্ক করে বলেছেন—অতি দ্রুত শান্তি চুক্তি ইউক্রেনের স্বাধীনতার জন্য হুমকি ডেকে আনতে পারে। তিনি কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চয়তাকে যে কোনো চুক্তির মূল শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন।
এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সোমবার (১ ডিসেম্বর) জেলেনস্কির সঙ্গে প্যারিসে বৈঠক করবেন। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, শান্তি অর্জন সম্ভব—যদি পুতিন ইউক্রেন দখলের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেন।