বিচারাধীন অবস্থায় মার্কিন কারাগারে আত্মহত্যা করেছিলেন কুখ্যাত জেফ্রি অ্যাপস্টেইন। তাঁরই প্রেমিকা ছিলেন সাবেক ব্রিটিশ মিডিয়া মোগল রবার্ট ম্যাক্সওয়েলের কন্যা গিলেইন ম্যাক্সওয়েল। অভিজাত সমাজের এই নারী শেষ পর্যন্ত শিশু যৌন পাচারে দোষী হন। বর্তমানে তিনি টেক্সাসের একটি কারাগারে বন্দী আছেন। কিন্তু এই কারাগারে তিনি ‘হোটেলের অতিথির মতো’ বিশেষ সুবিধা ভোগ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কারাগার বিশেষজ্ঞ স্যাম ম্যানজেল জানিয়েছেন, অস্বাভাবিক এমন পরিস্থিতি ওই কারাগারের অন্য বন্দীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ৬৩ বছর বয়সী ম্যাক্সওয়েলকে গত আগস্টে ফ্লোরিডার ট্যালাহাসি ফেডারেল কারাগার থেকে টেক্সাসের ফেডারেল প্রিজন ক্যাম্প ব্রায়ানে স্থানান্তর করা হয়। হিউস্টনের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এই কারাগারে সাধারণত ‘হোয়াইট কলার’ অপরাধীদের রাখা হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সেখানে তুলনামূলকভাবে শিথিল।
তবে বন্দীরা অভিযোগ করেছেন, ম্যাক্সওয়েল সেখানে গিয়ে ভিআইপি সুবিধা পাচ্ছেন এবং তাঁর উপস্থিতিতে পুরো ব্যবস্থাই বদলে গেছে। এই বিষয়ে ফক্স নিউজকে ম্যানজেল বলেন, ‘তার সঙ্গে যেন বন্দী নয়, বরং এক অতিথির মতো আচরণ করা হচ্ছে। এমন ব্যবস্থাপনা একেবারেই অস্বাভাবিক।’ তিনি দাবি করেন, ম্যাক্সওয়েলকে এই কারাগারে আনার পেছনে বিচার বিভাগের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ ছিল।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম্যাক্সওয়েলের আগমনের পর কারাগারে বারবার লকডাউন জারি হচ্ছে, সশস্ত্র প্রহরী মোতায়েন করা হয়েছে এবং অন্যান্য নিয়মেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এমনকি একদিন বন্দীদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা করা হয়। কারণ ম্যাক্সওয়েল তখন প্রার্থনালয়ে একান্ত বৈঠকে ছিলেন।
বন্দীদের ক্ষোভের অন্যতম কারণ হলো, যৌন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত কারও সাধারণত এই ধরনের স্বল্প নিরাপত্তার কারাগারে থাকার অনুমতি মেলে না। বিশেষ ছাড়ের ভিত্তিতে শুধু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে এমন সুযোগ দেওয়া হয়।
২০২২ সালে ম্যাক্সওয়েলকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বর্তমানে ব্রায়ান কারাগারের ৬০০ বন্দীর মধ্যে তাঁর সাজাই সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী।
এদিকে, গিলেইন ম্যাক্সওয়েল ও তাঁর প্রেমিক অ্যাপস্টেইনকে অভিযুক্ত করা অন্যতম ভিকটিম ভার্জিনিয়া রবার্টস জিউফ্রে সম্প্রতি আত্মহত্যা করেছেন। মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় তাঁর আত্মজীবনী। এই বইটি এখন নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বইটিতে ভার্জিনিয়া বর্ণনা করেছেন, কীভাবে ২০০০ সালের গ্রীষ্মে ট্রাম্পের মার-আ-লাগো রিসোর্টে ১৬ বছর বয়সে গিলেইন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয়। এই দেখা হওয়াই একসময় তাঁকে অ্যাপস্টেইনের দুঃস্বপ্নময় জগতে নিয়ে যায়। বইটি ২০২৪ সালের অক্টোবরে লেখা শেষ হয়েছিল। ছয় মাস পরই ভার্জিনিয়া আত্মহত্যা করেন।