লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার ভেতরে সশস্ত্র হামলা চালানোর আইনি পথ পরিষ্কার করতে নয়া ছক কষছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা স্টেট ডিপার্টমেন্ট তথাকথিত মাদকচক্র কার্টেল দে লস সোলেসকে এ মাসেই বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ধরনের চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে ভেনেজুয়েলার ভেতরে হামলা চালানোর সুযোগ দেবে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন–এর খবরে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনের অভিযোগ—ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ও তাঁর শীর্ষ সহযোগীরাই এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই গতকাল রোববার এ ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, ‘মাদুরো কিংবা তাঁর ঘনিষ্ঠ কোনো ব্যক্তি ভেনেজুয়েলার বৈধ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন না। কার্টেল দে লস সোলেস, ত্রেন দে আরাগুয়া ও সিনালোয়া কার্টেলের মতো অন্যান্য ঘোষিত বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে মিলে পৃথিবীর অর্ধেক অংশজুড়ে সন্ত্রাসী সহিংসতা ছড়াচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে মাদক পাঠাচ্ছে।’
সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ২৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এই ঘোষণার মধ্যেই ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক উপস্থিতি আরও জোরদার করেছে। রোববার ক্যারিবীয় সাগরে নোঙর করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড।
ট্রাম্প রোববার ইঙ্গিত দেন, কার্টেল দে লস সোলেসকে সন্ত্রাসী তালিকায় তোলা হলে ভেনেজুয়েলার ভেতরে মাদুরোর সম্পদ ও অবকাঠামো লক্ষ্য করতেও মার্কিন সামরিক বাহিনী সক্ষম হবে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইনগতভাবে সেটি সম্ভব, তবে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। মাদুরোর সঙ্গে কিছু আলোচনা হতে পারে; দেখি সেগুলো কোথায় যায়।’
ট্রাম্প দাবি করেন, ভেনেজুয়েলা কথা বলতে আগ্রহী। তবে বিস্তারিত বলেননি। শুক্রবার সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেও রোববার এসে ট্রাম্প আর নিশ্চিত কিছু বলেননি। আরেক প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ভেনেজুয়েলার ভেতরে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন তাঁর নেই।
তাঁর ভাষায়, ‘আমরা কংগ্রেসকে সবকিছুর বিষয়ে অবগত রাখতে চাই। আমরা তো দেশকে মাদক আর মাদক ব্যবসায়ীর হাত থেকে রক্ষা করছি...এ জন্য তাদের অনুমোদন লাগবে না। তবে তাদের জানিয়ে রাখা ভালো।’
যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। তাই সাম্প্রতিক সময়ে ভেনেজুয়েলা উপকূলে নৌ-হামলার বৈধতা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণায় কোনো গোষ্ঠীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুযোগ তৈরি হয় ঠিকই, তবে সরাসরি সামরিক শক্তি ব্যবহারের অনুমোদন এতে নেই।
তবু এই ঘোষণাকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সবচেয়ে কঠোর সন্ত্রাস দমন চিহ্নায়নগুলোর একটি ধরা হয়। ঘোষিত বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনকে কোনো মার্কিন নাগরিক জেনে-বুঝে সহায়তা দিতে পারেন না। এ ধরনের সংগঠনের প্রতিনিধি বা সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশও নিষিদ্ধ।
এদিকে, থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের কারাকাসভিত্তিক গবেষক ফিল গানসন সিএনএনকে বলেছেন, ‘কার্টেল দে লস সোলেস বাস্তবে কোনো সংগঠন নয়। এটি মূলত একটি সাংবাদিকতা সংশ্লিষ্ট শব্দ, যা ভেনেজুয়েলার কর্তৃপক্ষের মাদক পাচারে জড়িত থাকার ধারণাকে বোঝায়।’
তবে এর মানে এই নয় যে সামরিক বা সরকারি পর্যায়ে কারও সম্পৃক্ততা নেই। গানসন বলেন, ‘এখানে কলম্বিয়ান ও মেক্সিকান কার্টেলগুলো সক্রিয়। ওরিনোকো নদীপথে মাদক যায়, আবার গুপ্ত এয়ারস্ট্রিপ থেকে উড়োজাহাজে অপূর রাজ্য থেকে সেন্ট্রাল আমেরিকার দিকে পণ্য পাঠানো হয়। ওপরের স্তরের সহযোগিতা ছাড়া এগুলোর কোনোটাই সম্ভব নয়।’