ওসামা বিন লাদেন ৯/১১ হামলার জন্য সৌদি নাগরিকদের ব্যবহার করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্ক ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে। হোয়াইট হাউসে দাঁড়িয়ে এমনটিই জোর দিয়ে বলেছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। কথা বলেছেন জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়েও।
৯/১১ হামলায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবার সৌদি যুবরাজের কাছে এই ঘটনায় জবাবদিহির দাবি তুলছিল। সালমান মার্কিনদের আশ্বস্ত করেছেন, সৌদি আরব এমন ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তারপরও ওভাল অফিসে তাঁর উপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে হামলার পর বেঁচে যাওয়া মানুষেরা।
ওসামা বিন লাদেন ছিলেন সৌদি নাগরিক এবং আল-কায়েদা সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। এই সংগঠন ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে চারটি সমন্বিত হামলা চালিয়ে প্রায় ৩ হাজার মানুষকে হত্যা করে।
যুবরাজ বিন সালমানকে সাংবাদিকেরা ৯/১১ হামলা ও ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যৌথভাবে বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তি ও এফ-৩৫ জেট বিক্রির ঘোষণা দেওয়ার পর গণমাধ্যমের সামনে দাঁড়ান। তিনি দাবি করেন, ৯/১১ ছিল যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্ক নষ্ট করার কৌশল, আর যারা এই ব্যাখ্যায় বিশ্বাস করেন, তাঁরা আসলে লাদেনের উদ্দেশ্য পূরণেই সাহায্য করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী আর আমার পরিবারের যাঁরা আমেরিকায় থাকেন, তাঁদের কথা ভেবে আমার নিজেরই কষ্ট হয়। কিন্তু বাস্তবতার ওপর নজর দিতে হবে। সিআইএর নথি অনুযায়ী, ওসামা বিন লাদেন সেই ঘটনায় সৌদি লোকজনকে ব্যবহার করেছিলেন একটাই বড় কারণে—এই সম্পর্ক ধ্বংস করা, আমেরিকা-সৌদি সম্পর্ক ধ্বংস করা। এটাই ৯/১১-এর উদ্দেশ্য। তাই যাঁরা এই ব্যাখ্যাকে মেনে নেন, তাঁরা আসলে লাদেনের সেই উদ্দেশ্যকে সফল করতে সাহায্য করছেন। সে জানত, আমেরিকা ও সৌদি আরবের শক্তিশালী সম্পর্ক চরমপন্থার জন্য ক্ষতিকর, সন্ত্রাসবাদের জন্য ক্ষতিকর।’
সৌদি যুবরাজ বলেন, ‘আমাদের তার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করতে হবে এবং সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করে এগোতে হবে।’ এ সময় তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুবরাজ বিন সালমান আরও বলেন, ‘এটা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
সালমান ৯/১১কে ‘বড় ভুল’ আখ্যা দিয়ে নিশ্চিত করেন যে সৌদি প্রশাসন এমন ভুল আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘কারও জীবন এভাবে হারানো, যেখানে আসলে কোনো উদ্দেশ্যই নেই বা আইনসংগত কোনো প্রক্রিয়াও নেই, সেটা শুনলে ভীষণ কষ্ট লাগে। আমাদের জন্যও সৌদি আরবে এটা বেদনার। আমরা তদন্তের সব সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছি, আমাদের ব্যবস্থাও উন্নত করেছি যাতে এমন কিছু আর না ঘটে। এটা ছিল বেদনাদায়ক এবং বিশাল এক ভুল। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, যেন এটা আর না ঘটে।’
এদিকে খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করায় এক সাংবাদিকের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তিনি (সালমান) বিষয়টা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।’ যদিও ২০২১ সালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, খাসোগি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন সালমানই। সালমান অবশ্য হত্যাকাণ্ডকে ‘বেদনাদায়ক’ বলে আখ্যা দেন।
২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে নিহত হন সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি, যিনি ছিলেন সৌদি সরকারের কড়া সমালোচক। এই হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্ককে তীব্র টালমাটালে ফেলে দেয়। মার্কিন সংস্থাগুলো যুবরাজ সালমানকেই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। সালমান অবশ্য নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে আসছেন।