সৌদি আরবের কার্যত শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) এক রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। বাংলাদেশ সময় সোমবার রাতে (১৭ নভেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বঠকে বসছেন।
গত কয়েক দশক ধরে তেল ও নিরাপত্তা ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, এবারের সফরে সেই সম্পর্ক আরও গভীর করার পাশাপাশি বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং সম্ভাব্যভাবে বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচিতেও সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে সৌদি এজেন্টরা হত্যা করার পর এটাই এমবিএসের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। এই হত্যাকাণ্ড বিশ্ব জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যমতে, খাশোগিকে ‘ধরা বা হত্যার’ অনুমোদনে এমবিএস জড়িত ছিলেন। তবে তিনি বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। দীর্ঘ সাত বছর পর এবার দুই দেশই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী হয়েছে।
ট্রাম্পের লক্ষ্য সৌদি আরবের প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতিকে কাজে লাগানো। এ ক্ষেত্রে সৌদি আরব এবং স্বয়ং এমবিএসকে জড়িয়ে যেসব মানবাধিকার ইস্যু সামনে এসেছে সেগুলো এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল ট্রাম্প এর আগেও দেখিয়েছেন। এবারও তা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে এমবিএসের প্রধান লক্ষ্য আঞ্চলিক অস্থিরতার মধ্যে নিজ দেশের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) প্রবেশাধিকার এবং সৌদির বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির দিকে অগ্রগতি নিশ্চিত করা।
প্রতিরক্ষা চুক্তি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু
দীর্ঘদিন ধরেই সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তেল সরবরাহে সুবিধা দিয়ে এসেছে। এর বিনিময়ে তারা পেয়েছে নিরাপত্তা। তবে ২০১৯ সালে ইরানের আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর প্রতিক্রিয়ার অভাব সেই সমীকরণে অনিশ্চয়তা তৈরি করে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের কাতার আক্রমণের পর আবারও উদ্বেগ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র কাতারের সঙ্গে নির্বাহী আদেশে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, সৌদিও একই ধরনের কিছু পেতে পারে।
সৌদি আরব চায় মার্কিন কংগ্রেসে অনুমোদিত একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিরক্ষা চুক্তি। তবে মার্কিন কর্তৃপক্ষ এই ধরনের চুক্তির ক্ষেত্রে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার শর্ত বেঁধে দিতে চাইছে। আবার সৌদি নেতৃত্ব এই চুক্তির ওপর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মার্কিন অঙ্গীকারের শর্ত যুক্ত করেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সম্প্রতি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করায় বিষয়টি আরও জটিল হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এবার ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে সৌদি–যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সহযোগিতার কাঠামো ঘোষণা করবেন। যদিও এটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিরক্ষা চুক্তির সমতুল্য নয়, তবে দুই পক্ষের মধ্যে তাৎক্ষণিক পরামর্শ, প্রতিরক্ষা সহায়তা, অস্ত্র প্রতিস্থাপন, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন কিংবা নৌবাহিনী মোতায়েনের মতো সহায়তার পথ খুলে দিতে পারে।
আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার মধ্যে প্রযুক্তি ও পরমাণু চুক্তি
সৌদি আরব তার ভিশন ২০৩০–এর অংশ হিসেবে অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে পারমাণবিক শক্তি ও উন্নত এআই প্রযুক্তি চাইছে। উন্নত কম্পিউটার চিপে প্রবেশাধিকার পেলে সৌদি আরব এআই–এর কেন্দ্রীয় হাব হতে পারে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারবে।
এমবিএস বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি চান। এটি হলে সৌদি আরব মার্কিন পরমাণু প্রযুক্তি ও বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধায় প্রবেশাধিকার পাবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র চায় সৌদি আরব ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বা ব্যবহৃত জ্বালানি পুনঃপ্রক্রিয়াজাত না করার প্রতিশ্রুতি দিক।
এই ইস্যুতে কিছু অগ্রগতি হয়েছে বলে ইঙ্গিত মিলছে। বিশ্লেষকদের মতে, সফরের সময় অন্তত একটি নীতিগত ঘোষণা বা চুক্তির পথে অগ্রগতির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।