বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্পদ তহবিল নরওয়ে সম্পদ তহবিল তাদের বিনিয়োগের তালিকা থেকে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ক্যাটারপিলারকে বাদ দিয়েছে। অভিযোগ—পশ্চিম তীর ও ফিলিস্তিনে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সম্পৃক্ততা রয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্মাণ, খনন ও ভারী শিল্পের জন্য বড় ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরি করা প্রতিষ্ঠান ক্যাটারপিলারকে বিনিয়োগের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে গত সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে নরওয়ে সম্পদ তহবিল। একই সঙ্গে আরও পাঁচটি ইসরায়েলি ব্যাংককেও এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর এরই মধ্যে আরও ২০টি ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ বন্ধ করেছে দুই ট্রিলিয়ন ডলারের এই তহবিল। তবে, এবারই প্রথম কোনো মার্কিন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ বন্ধ করা হলো। তহবিলের নৈতিক কাউন্সিল বলছে, ‘গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি সম্পদ ধ্বংসে ক্যাটারপিলারের যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে কারো কোনো সন্দেহ নেই। ফিলিস্তিনিদের অধিকার লঙ্ঘনে তাদের যন্ত্র যে ব্যবহার করা হচ্ছে তা বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি তারা। এমনকি তারা আরও যন্ত্রপাতি ইসরায়েলে পাঠাতে যাচ্ছে। সুতরাং কাউন্সিল মনে করে গাজা ও পশ্চিম তীরের মানুষের অধিকার লঙ্ঘনে পুরোপুরিভাবেই জড়িত ক্যাটারপিলার। তাই প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
তহবিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সব সুপারিশ আলাদা করে খতিয়ে দেখা না হলেও যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে যে বাদ পড়ার জন্য যা যা শর্ত রয়েছে সবই কোম্পানিগুলোর পূরণ হয়েছে। এ মাসের শুরুতে নরওয়ের নরজেস ব্যাংকের নির্বাহী বোর্ড ঘোষণা দেয়, পশ্চিম তীর ও গাজার সঙ্গে যুক্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে তারা বিনিয়োগ তালিকা থেকে সরিয়ে দেবে। তবে শেয়ার বিক্রি শেষ হওয়ার পর তাদের নাম প্রকাশ করা হবে। ৩০ জুন পর্যন্ত নরজেস ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাছে ক্যাটারপিলারের প্রায় ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার ছিল। এটি কোম্পানির মোট শেয়ারের প্রায় ১ দশমিক ২ শতাংশ। সেই হিসাবে নরওয়ের এই তহবিল ক্যাটারপিলারের অষ্টম বৃহত্তম শেয়ারধারী ছিল।
তহবিল থেকে বাদ পড়ার তালিকায় রয়েছে ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক অব ইসরায়েল, ব্যাংক লুয়েমি লে ইসরায়েল, মিজরাহি তেফাহত ব্যাংক, ফিবি হোল্ডিংস এবং ব্যাংক হ্যাপোয়ালিম। এসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ—পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনে অর্থায়ন করছে তারা। তহবিল জানায়, যুদ্ধ ও সংঘাতের পরিস্থিতিতে মানুষের অধিকার লঙ্ঘনে জড়িয়ে পড়ার ‘অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকি’ থাকার কারণে এই পাঁচ ব্যাংক এবং ক্যাটারপিলারকে বিনিয়োগের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালের জুনে ইসরায়েল ও প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর মধ্যে ছয় দিনের যুদ্ধে পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, পূর্ব জেরুজালেম ও গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরায়েল। এই ভূখণ্ডগুলোকে আন্তর্জাতিক মহল এখনো ‘দখলকৃত এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করে। জাতিসংঘ বলেছে, ওই সব এলাকায় ইসরায়েলি বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ।
তহবিলের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রায় দেড় শতাংশ শেয়ারের মালিক নরওয়ের এই তহবিল নৈতিক নির্দেশনার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, যা সংসদ নির্ধারণ করে দেয়। তহবিলকে পরামর্শ দেয় একটি স্বাধীন নৈতিকতা কাউন্সিল, যা নরওয়ের অর্থ মন্ত্রণালয় গঠন করেছে। এই কাউন্সিল নিয়মিতভাবে বিনিয়োগ পর্যালোচনা করে এবং কোনো কোম্পানিকে পর্যবেক্ষণ বা বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে।