সম্প্রতি সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে চলতি বছরের সবচেয়ে বড় হামলাটি পরিচালনা করেছে একটি বিদ্রোহী বাহিনী। তারা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোর বড় একটি অংশ দখল করে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশটির দক্ষিণে অবস্থিত হামা শহর অভিমুখেও এগিয়ে যাচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, আকস্মিক এই আক্রমণের জের ধরে সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকারের মিত্র রাশিয়া ২০১৬ সালের পর আবারও বিমান হামলা চালিয়েছে। এর আগে শহরটি ছেড়ে গিয়েছিল সিরিয়ার সামরিক বাহিনী।
আলেপ্পো দখলে নেওয়া বিদ্রোহীদের সম্পর্কে জানা গেছে, তারা ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম। সিরিয়ার সংঘাতে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর দীর্ঘ ও জটিল ইতিহাস রয়েছে।
হায়াত তাহরির আল-শাম সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ২০১১ সালে ‘জাবহাত আল-নুসরা’ নামে আল-কায়েদার সরাসরি একটি সহযোগী সংস্থা হিসেবে গঠিত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর নেতা আবু বকর আল-বাগদাদিও এই দলটির গঠনে ভূমিকা রেখেছিলেন।
শুরুর দিকে সশস্ত্র দলটি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ও ভয়ানক গোষ্ঠীগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। জিহাদি আদর্শই তাদের মূল চালিকাশক্তি ছিল। ফলে ‘ফ্রি সিরিয়া’ নামে বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহী জোটের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই জোটের সঙ্গে হায়াত ‘জাবহাত আল-নুসরা’ গোষ্ঠীর কিছু মত পার্থক্য ছিল।
২০১৬ সালে জাবহাত আল-নুসরা গোষ্ঠীর নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জাওলানি আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন করে নতুন একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনই পরে ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় গত চার বছর ধরে যুদ্ধ কার্যত স্থবির হয়ে ছিল। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশটির বড় শহরগুলোতে নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। তবে দেশের কিছু অঞ্চল এখনো তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশেই ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ গোষ্ঠীর বিচরণ ভূমি। সেখান থেকেই এই বিদ্রোহীরা আকস্মিকভাবে আলেপ্পো শহরে হামলা চালিয়েছে।
রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়া শান্ত হয়ে এলেও মূলত ইদলিব প্রদেশেই বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আসাদের বাহিনীর সংঘর্ষ কিছু মাত্রায় চলমান ছিল। তবে এই সংঘর্ষ থামাতে ২০২০ সালে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছিল।
বর্তমানে ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ গোষ্ঠী ইদলিবেই শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলেছে। আলেপ্পোতে আকস্মিক হামলা চালিয়ে তারা কীভাবে সিরিয়ার সংঘাতকে নতুন করে উসকে দিচ্ছে এবং আসাদের শাসনের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে—তা এখন দেখার বিষয়।