ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান হামলার সঙ্গে সঙ্গে স্থল অভিযানও শুরু করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এতে বিগত ২৪ ঘণ্টায় ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে গতকাল রোববার জানিয়েছে গাজার জনসংযোগ বিভাগের মহাপরিচালক। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, গাজা উপত্যকায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে।
যুদ্ধবিরতির শেষ হওয়ার পর গত শুক্রবার থেকে আবারও গাজায় নির্বিচার বোমা হামলা চালানো শুরু করে আইডিএফ। শুরুতে উত্তরাঞ্চলে হামলা চালানো হচ্ছিল। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে চলে গেলে নিরাপদ থাকা যাবে—এ কথা বলে সাধারণ মানুষকে দক্ষিণাঞ্চলে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেয় আইডিএফ। এখন সেই দক্ষিণাঞ্চলেও বিমান থেকে অনবরত বোমা ফেলা হচ্ছে। এতে ব্যাপক বেসামরিক প্রাণহানি ঘটছে।
এক দিনে ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গাজাকে ‘মৃত্যু উপত্যকা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্যমতে, দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস, রাফাহ এবং কিছু উত্তর অংশে তীব্র ইসরায়েলি বোমা হামলার খবর পাওয়া গেছে। গাজার বাসিন্দারা বলেছেন যে দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি স্থল অভিযানের আশঙ্কা করছিলেন তাঁরা। ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো মধ্য গাজার খান ইউনিস এবং দেইর আল-বালাহের মধ্যে রাস্তা কেটে ফেলে গাজা উপত্যকাকে কার্যকরভাবে তিনটি এলাকায় বিভক্ত করে ফেলেছে।
তিন সন্তানের বাবা ৩৭ বছর বয়সী মাহের রয়টার্সকে বলেন, ‘আগে আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতাম যে এই যুদ্ধে আমরা মারা যাব কি না? কিন্তু শুক্রবার থেকে গত দুই দিনে বুঝতে পেরেছি, এটা কেবল সময়ের ব্যাপার। আমি গাজা সিটির বাসিন্দা। পরিবারের সবাই গাজা উপত্যকার দক্ষিণে আল-কারারাতে চলে এসেছিলাম। গতকাল খান ইউনিসের গভীরে আশ্রয় নিয়েছি। আজ রাফাহে বোমা হামলা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছি।’
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলিদের এমন অব্যাহত হামলা গাজার বাসিন্দাদের মিসরের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এতে সেখানে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। মিসরও অভিযোগ করেছে, গাজার বাসিন্দাদের মিসরের দিকে পাঠানোর চেষ্টা করছে ইসরায়েল। খান ইউনিস থেকে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের সীমান্তবর্তী রাফাহে চলে যাওয়ার নির্দেশ ছিল এরই অংশ।
এদিকে চলমান গণহত্যাকে স্বীকৃতি না দিলেও বেসামরিকদের মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, গাজায় অনেক নিরপরাধ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করাকে ইসরায়েলের ‘নৈতিক দায়িত্ব’ বলে মন্তব্য করেছেন ডিফেন্স সেক্রেটারি লয়েড অস্টিন।
গাজায় সাধারণ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যেসব বোমা ব্যবহার করছে সেগুলোর বেশির ভাগই সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল ও ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ইউএস সি-১৭ সামরিক কার্গো বিমান দিয়ে ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার বোমা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ইসরায়েলিদের ১৫৫ মিলিমিটারের ৫৭ হাজার শেল দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।