হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

গাজায় ফের যুদ্ধ শুরুর হুমকি নেতানিয়াহুর

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত

যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় আবারও যুদ্ধ শুরু করার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গতকাল রোববার তিনি বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আবারও শুরু করতে প্রস্তুত তাঁর দেশ। এদিকে, হামাস অভিযোগ করেছে, ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি স্থগিত করে ইসরায়েল পাঁচ সপ্তাহের গাজা যুদ্ধবিরতিকে বিপদের মুখে ফেলছে।

সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ আগামী মার্চের শুরুতে শেষ হওয়ার কথা। তবে পরবর্তী ধাপ কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সে বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি গাজায় ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিধ্বংসী যুদ্ধ কার্যত স্থগিত রেখেছে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেওয়ার পর গতকাল রোববার ইসরায়েল দখলকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। গাজায় চলমান যুদ্ধে পশ্চিম তীরে সহিংসতা চরমে পৌঁছেছে।

এর আগে, গত শনিবার গাজা থেকে ছয় ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পাওয়ার পর ইসরায়েল ৬ শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তি স্থগিত করে। এরপর রোববার এক সামরিক অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহু বলেন, যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে তাঁরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে চান, তবে অন্য উপায়েও তা নিশ্চিত করা হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে পুনরায় তীব্র লড়াই শুরু করতে প্রস্তুত।’

উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে হামাস ২৫ জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। এসব জিম্মির মুক্তি অনুষ্ঠানে মুখোশধারী বন্দুকধারীদের উপস্থিতি এবং জিম্মিদের বলপ্রয়োগ করে কথা বলানো নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে ‘অপমানজনক অনুষ্ঠান’ আয়োজনের অভিযোগ এনে ৬ শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দীর নির্ধারিত মুক্তি স্থগিত করে। নেতানিয়াহু বলেন, ‘গাজায় অপমানজনক অনুষ্ঠানের’ কারণে তাঁর সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জিম্মি-বন্দী বিনিময় প্রক্রিয়া সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি আগেও আহ্বান জানিয়েছিল, যাতে এসব বিনিময় ‘সম্মানজনক ও ব্যক্তিগত’ উপায়ে সম্পন্ন হয়।

এদিকে, হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা বাসেম নাইম সতর্ক করে বলেন, বন্দী মুক্তি স্থগিত হওয়ায় ‘পুরো চুক্তি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে।’ তিনি যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারীদের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান, যাতে তারা ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করে চুক্তি অনুযায়ী বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করতে পারে। যুদ্ধবিরতির সময় উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে লঙ্ঘনের অভিযোগ তুললেও এখন পর্যন্ত এটি টিকে রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর ইসরায়েল গোষ্ঠীটিকে ধ্বংস করার ঘোষণা দেয় এবং গাজায় আগ্রাসন শুরু করে। এই আগ্রাসনে অঞ্চলটিতে ৪৮ হাজারে বেশি মানুষ নিহত এবং ১ লাখের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

রোববার নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা হামাসের অধিকাংশ সংগঠিত বাহিনীকে ধ্বংস করেছি, কিন্তু কোনো ভুল বোঝাবুঝি যেন না হয়—আমরা পুরোপুরি আমাদের যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করব, তা আলোচনার মাধ্যমে হোক বা অন্য উপায়ে।’

ইসরায়েলের যুদ্ধের মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে—হামাসকে পরাজিত করা এবং ২০২৩ সালের হামলায় অপহৃত সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা অন্যতম। বর্তমানে ৬২ জন জিম্মি গাজায় রয়ে গেছেন, যাদের মধ্যে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী ৩৫ জন মারা গেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, তিনি এই সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন যাতে যুদ্ধবিরতির ‘প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানো যায়।’ তিনি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যে, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরু করতে ও সেটি সম্পন্ন করতে আমরা যথেষ্ট সময় পাব।’

গাজার যুদ্ধের পাশাপাশি, ইসরায়েলি বাহিনী পশ্চিম তীরে তার সামরিক অভিযান আরও তীব্র করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা উত্তর পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে একটি ট্যাংক ডিভিশন পাঠাবে, যা গত ২০ বছরে এই অঞ্চলে প্রথমবারের মতো ট্যাংক মোতায়েনের ঘটনা। এটিকে তারা তাদের ‘সম্প্রসারিত অভিযানের’ অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গাজা যুদ্ধবিরতি শুরুর পরপরই পশ্চিম তীরে একটি বড় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই সামরিক অভিযানের কারণে জেনিন এবং অন্যান্য শরণার্থীশিবির থেকে ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, তিনি সেনাদের নির্দেশ দিয়েছেন ‘আগামী এক বছর ধরে ফিলিস্তিনি শিবিরগুলোতে অবস্থান করতে এবং বাসিন্দাদের ফিরে আসা ও সন্ত্রাসবাদ পুনরুত্থান ঠেকাতে।’

লেবেক রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির গোয়েন্দা প্রধান মাইকেল হোরোভিটজ বলেন, পশ্চিম তীরে ট্যাংক মোতায়েন ‘যুদ্ধবিরতির জন্য খুবই স্পর্শকাতর সময়ে’ ঘটছে। তিনি উল্লেখ করেন, নেতানিয়াহু দেশীয় চাপে রয়েছেন। তাঁর যুদ্ধ পরিচালনা নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে এবং তিনি হয় যুদ্ধ পুনরায় শুরু করবেন বা তার কট্টর-ডানপন্থী জোট সরকারের পতনের ঝুঁকি নেবেন।

ফিলিস্তিনিদের প্রলোভনে ফেলে গাজা খালি করার মিশনে ইসরায়েলঘনিষ্ঠ ভুয়া সংস্থা

গাজায় নতুন শাসনকাঠানো কার্যকর শিগগির: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পাঠদান শুরু

ইসরায়েলি সেটেলারদের আগ্রাসন ঠেকাতে ফিলিস্তিনি গ্রামে মানবঢাল একদল স্বেচ্ছাসেবক

সিরিয়ায় একযোগে ৭০ স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা

সমুদ্র উপকূলে পাওয়া গ্যাস বিক্রি করে গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র–আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের

আরব বসন্তে ক্ষমতাচ্যুত একনায়কেরা এখন কোথায় কেমন আছেন

পশ্চিম তীরে এক বছরে ১৫০০ বাড়ি ভেঙেছে ইসরায়েল, ভাঙবে আরও ২৫টি

বৃষ্টি, বন্যা আর আবর্জনা: গাজাবাসীর অন্তহীন শীতের রাতের দুঃসহ বেদনা

গাজায় হামলা চালিয়ে হামাসের শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের