ইসরায়েলের রাজধানী জেরুজালেমে এক ভয়াবহ বন্দুক হামলায় ছয়জন নিহত ও অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় হামলাকারী দুই ফিলিস্তিনিও নিহত হয়েছেন। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে শহরের উত্তর প্রান্তের রামোট জংশন এলাকায় ব্যস্ত বাসস্টপে এ ঘটনা ঘটে। ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, একটি গাড়িতে করে আসা দুই ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী যাত্রীদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালান। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডিউটিতে না থাকা এক সেনা ও এক বেসামরিক নাগরিক পাল্টা গুলি চালিয়ে দুই হামলাকারীকে হত্যা করেন।
হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও এক নারী রয়েছেন। নিহত পুরুষদের বয়স ২৫ থেকে ৭৯ বছরের মধ্যে এবং নারীর বয়স ৬০ বছর। স্থানীয় হাসপাতালগুলো জানিয়েছে, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশ না করলেও ধারণা করা হচ্ছে, তাঁরা পশ্চিম তীরের আল-কুবেইবা ও কাতান্না গ্রাম থেকে এসেছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে একাধিক অস্ত্র, গুলি ও একটি ছুরি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন, ‘আমরা একাধিক ফ্রন্টে তীব্র সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে লিপ্ত। শত শত হামলা ঠেকাতে সক্ষম হলেও আজকের ঘটনাটি আটকানো সম্ভব হয়নি।’ তিনি জানান, হামলাকারীদের সহায়তাকারীদের ধরতে পশ্চিম তীরের গ্রামগুলো ঘিরে ফেলা হয়েছে।
ঘটনাটির একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, হঠাৎ গুলির শব্দে নারী-পুরুষ ও শিশুরা দৌড়ে পালাচ্ছে। একটি বাসের কাচ ভেঙে যায় গুলিতে। আহত যাত্রী এস্টার লুগাসি স্থানীয় টেলিভিশনে বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আমার সময় শেষ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছিল, আমি যেন অনন্তকাল দৌড়াচ্ছি।’
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ইয়াকভ পিন্টো (২৫), ইসরায়েল ম্যাটজনার (২৮), রাব্বি যোসেফ ডেভিড (৪৩), মরদখাই স্টেইনস্যাগ (৭৯), লেভি ইয়িৎসহাক প্যাশ ও সারা মেন্ডেলসন (৬০)।
হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও যুক্তরাজ্যের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার। অপরদিকে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কার্যালয় সব ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে। তবে হামাস একে ‘দুই ফিলিস্তিনি যোদ্ধার বীরত্বপূর্ণ অভিযান’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি ইসরায়েলি দখলদারি ও গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গত কয়েক মাসে জেরুজালেমে বড় ধরনের হামলা খুব বেশি হয়নি। তবে গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যে এ ঘটনা নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। মার্কিন প্রশাসনের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিবিনিময় নিয়ে আলোচনার মুহূর্তে এ হামলা সংঘটিত হলো।