ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৬৩ হাজার ৩৭১ জনে। এর মধ্যে কেবল গতকাল শনিবারই অনাহারে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খবর আনাদোলুর।
খবরে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি নির্বিচার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩২ জনে। এর মধ্যে ১২৪ জনই শিশু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালগুলোতে ৬৬ জনের লাশ আনা হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে ৩৪৫ জন। এ নিয়ে ইসরায়েলি হামলায় মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৫। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বহু মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে আছে। উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।
এ ছাড়া, গত ২৪ ঘণ্টায় মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আরও ১৫ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২০৬ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত সহায়তা নিতে গিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ২১৮ জনে এবং আহতের সংখ্যা ১৬ হাজার ৪৩৪।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজার সব সীমান্ত সম্পূর্ণ বন্ধ করে রেখেছে। এর ফলে ২৪ লাখ মানুষ অনাহারের মুখে পড়েছে। জাতিসংঘ সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা মূল্যায়নে গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এই দুর্ভিক্ষ আরও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
গাজা গভর্নরেটে দুর্ভিক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এটি দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিস গভর্নরেটেও ছড়িয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট পর্যবেক্ষক সংস্থা আইপিসি। সংস্থাটি দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করার পর থেকে অন্তত ৫৪ জন অনাহারে মারা গেছে, এর মধ্যে রয়েছে ৯ শিশু।
টানা ২২ মাসের সংঘাতের পর আইপিসি জানিয়েছে, গাজার অর্ধকোটি মানুষ এখন অনাহার, নিঃস্বতা ও মৃত্যুর মুখোমুখি। আরও প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার মানুষ জরুরি খাদ্য সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
এর আগে, ক্ষণস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পর চলতি বছরের ১৮ মার্চ ইসরায়েলি সেনারা আবারও গাজায় হামলা শুরু করে। এর পর থেকে ১১ হাজার ২৪০ জন নিহত এবং ৪৭ হাজার ৭৯৪ জন আহত হয়েছেন। এতে জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি ভেস্তে যায়।
গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধের দায়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। গাজায় চালানো এই যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে।