সিরিয়ার উপকূলীয় প্রদেশ লাতাকিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ দাবানল। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে সাহায্য চেয়েছে দেশটির সরকার।
বুধবার আমিরাতভিত্তিক দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, ইতিমধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে তুরস্ক, জর্ডান এবং লেবাননের দমকল বাহিনী। এ ছাড়া সাইপ্রাস থেকেও বিমান পাঠানোর প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন সিরিয়ার জরুরি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী রায়েদ আল সালেহ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী জানান, বর্তমানে ১৬টি বিমান আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে, যা শিগগির ২০-এ পৌঁছাতে পারে। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলীয় লাতাকিয়ার রাস আল বাসিত অঞ্চলের আল ঘাসসানিয়া গ্রাম থেকে অন্তত ২৫টি পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তীব্র বাতাস, দুর্গম ভূখণ্ড এবং বিস্ফোরিত না হওয়া গোলাবারুদের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আল সালেহ। ইতিমধ্যে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর এলাকা আগুনে পুড়ে গেছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানার বরাতে জানা গেছে, রাস আল বাসিত এলাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। অপরদিকে, অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নূরেদ্দিন আল বাবা জানান, আগুন লাগানোর ঘটনায় কিছু সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে এবং প্রমাণ মিললে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে।
এই দাবানল লাতাকিয়া ছাড়াও বানিয়াস ও তারতুস প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। উপকূলীয় এই অঞ্চল সিরিয়ার সবুজ ভূখণ্ডের বড় একটি অংশ, যা ২০১০ সালের তথ্য অনুযায়ী দেশের মোট ভূমির প্রায় ২ শতাংশ বা ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত।
দীর্ঘদিনের অবৈধ গাছ কাটা, অননুমোদিত নির্মাণ ও কৃষিকাজ এবং ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের প্রভাবে সিরিয়ার বনাঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একসময় মধ্যপ্রাচ্যের খাদ্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত সিরিয়া বর্তমানে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০০০-এর দশকের শেষ দিকে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি ও অবৈধভাবে পানি উত্তোলনের কারণে দেশটির ভূগর্ভস্থ জলাধার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকেই আমদানি করা গমের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের।
দাবানলের ভয়াবহতা এবং বন ও কৃষির ওপর এর প্রভাব ইতিমধ্যে সিরিয়াকে নতুন এক মানবিক সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।