ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটক এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্যের সব নারী কর্মী এখন থেকে প্রতি মাসে এক দিন করে বেতনসহ ঋতুকালীন ছুটি পাবেন। সরকারি ও বেসরকারি—উভয় খাতেই এই সুবিধা প্রযোজ্য হবে। এর ফলে ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে কর্ণাটক এমন অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি গ্রহণ করল, যা নারী কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেয়।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ‘ভারতের সিলিকন ভ্যালি’ নামে পরিচিত কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে অসংখ্য আন্তর্জাতিক আইটি ও গ্রাহকসেবা কেন্দ্র রয়েছে। কর্ণাটক মন্ত্রিসভা জানিয়েছে, এই নতুন নীতি কর্মস্থলে নারীর স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াবে এবং ‘মাসিক’ নিয়ে প্রচলিত সামাজিক ট্যাবু বা লজ্জার সংস্কৃতি ভাঙতে সাহায্য করবে।
রাজ্যের আইনমন্ত্রী এইচ কে পাটিল বলেন, ‘অন্য রাজ্যে এই নীতি সফল হয়েছে। আমরা সেই মডেল অনুসরণ করছি। এটি কর্মজীবী নারীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে।’ বর্তমানে ওডিশা ও বিহারে শুধু সরকারি চাকরিরত নারীরা এই ঋতুকালীন ছুটি পান। আর কেরালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মীদের জন্য এই সুযোগ রয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, ‘ঋতুকালীন ছুটির নীতি চালুর ফলে রাজ্যের সব নারী কর্মী প্রতি মাসে এক দিন বেতনসহ ছুটি নিতে পারবেন, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।’
এই বিষয়ে এক্স মাধ্যমে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া লিখেছেন, ‘ঋতুকালীন ছুটি নীতি ২০২৫-এর মাধ্যমে কর্ণাটকের নারীরা এখন থেকে প্রতি মাসে এক দিনের বেতনসহ ছুটি পাবেন—এটি আরও মানবিক, সহানুভূতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশ তৈরির পদক্ষেপ।’
নারী অধিকারকর্মী বৃন্দা আদিগে এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে তিনি বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি সংগঠিত খাতে এমন সহায়তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার মাধ্যমে এই নীতি দেখিয়ে দিয়েছে—নারীর কল্যাণ টেকসই উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ।’ তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের জন্য এটি একটি দৃষ্টান্তমূলক সূচনা।’
‘অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস’-এর কর্ণাটক শাখা সিদ্ধান্তটিকে ‘অগ্রসর ও সাহসী পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রতি মাসে নারীর জন্য এক দিনের ঋতুকালীন ছুটির দাবি জানিয়ে আসছিল।
ভারতে এখনো অনেক জায়গায় মাসিক নিয়ে লজ্জা, কুসংস্কার ও অজ্ঞতা বিরাজ করে। বিশেষ করে গ্রামীণ ও নিম্নআয়ের অঞ্চলগুলোতে। এসব অঞ্চলে সাশ্রয়ী ও স্বাস্থ্যকর স্যানিটারি পণ্যের অভাব নারীদের জন্য বড় সমস্যা।
বিশ্বে জাপান ১৯৪৭ সালেই ঋতুকালীন ছুটিকে শ্রমিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। পরবর্তীতে স্পেন, সুইডেন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান ও জাম্বিয়া একই ধরনের নীতি গ্রহণ করে।
তবে ভারতে এই ধারণা নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধিতাও দেখা গেছে। ২০২৩ সালে সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘একজন নারীর মাসিক চক্র তার নিয়োগকর্তার জানার বিষয় কেন হবে?’ এই বক্তব্য পরবর্তীতে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।