জার্মান যাজক হেনরিক লেনকাইট এক চমকপ্রদ সত্যের মুখোমুখি হয়েছেন। জানতে পেরেছেন—নাজি জার্মানির কুখ্যাত এসএস প্রধান ও হলোকাস্টের জনক হেইনরিখ হিমলারের নাতি তিনি।
৪৯ বছর বয়সী লেনকাইট বর্তমানে স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। একদিন ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি উইকিপিডিয়ায় তাঁর শৈশবে দেখা নানি হেডভিগ পটহাস্টের একটি ছবি দেখতে পান। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, হেডভিগ ছিলেন হিমলারের উপপত্নী!
শৈশবে যে নানি চকলেট খাইয়ে আদর করতেন, তিনিই নাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিমলারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন এবং এ সম্পর্কের ফলেই নিজের মায়ের জন্ম হয়েছিল জানতে পেরে বেশ অবাক হন লেনকাইট। তিনি জানান, তাঁর মা ২০১৯ সালে মারা যান এবং কখনো নানির এ সম্পর্কের কথা বলে যাননি।
লেনকাইট সারা জীবন ভেবে এসেছেন, হেডভিগের স্বামী হান্স স্টেক ছিলেন তাঁর প্রকৃত নানা। কিন্তু একটি ডকুমেন্টারি দেখে কৌতূহলবশত হিমলার সম্পর্কে পড়তে গিয়ে তিনি হঠাৎ আবিষ্কার করেন নিজের মাতৃকুলের এ ভয়ংকর ইতিহাস।
লেনকাইট বলেন, ‘উইকিপিডিয়ায় তাকিয়ে দেখি, আমার নানির মুখ! তখন স্ত্রীর দিকে ফিরে বলেছিলাম—আমি কি সত্যিই তাঁর নাতি?’
লেনকাইট আরও বলেন, ‘আমার পুরো জীবনটাই যেন এক মিথ্যা ছিল। ৪৭ বছর ধরে আমি সত্য না জেনে বেঁচে ছিলাম।’
হেডভিগ পটহাস্ট ও হিমলারের সম্পর্ক নিয়ে ঐতিহাসিক সূত্রে নানা তথ্য পাওয়া যায়। বলা হয়, ১৯৩৮ সালের বড়দিনে তাঁরা একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন। তাঁদের চিঠিতে হিমলার তাঁর প্রেয়সীকে ‘বান্নি’ এবং হেডভিড তাঁকে ‘কিং হেইনরিখ’ বলে ডাকতেন। ১৯৪২ সালে তাঁদের পুত্র হেলগে ও ১৯৪৪ সালে কন্যা নানেট-ডোরোথিয়া (লেনকাইটের মা) জন্ম নেন।
যুদ্ধের শেষ দিকে ১৯৪৫ সালে হিমলার ব্রিটিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় আত্মহত্যা করেন। পরে হেডভিগ ১৯৫৫ সালে হান্স স্টেককে বিয়ে করেন।
জার্মান পত্রিকা ডের স্পিগেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লেনকাইট জানান, সত্যটি জানতে তাঁর এক বছর লেগেছে এবং বিষয়টি সন্তানদেরও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কীভাবে আমার নানি এমন এক দানবকে ভালোবাসতে পেরেছিলেন। তবু আমি বিশ্বাস করি, আমার বাবা-মা কেউই নাৎসি মতবাদে বিশ্বাস করতেন না।’
আরও একটি বিষয় হলো—১৯৯৪ সালে নানির শেষকৃত্যে লোকজনের অনুপস্থিতি দেখে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন লেনকাইট। কিন্তু আজ তিনি বুঝতে পারছেন, সেই নীরবতার পেছনে লুকিয়ে ছিল এক ভয়াবহ অতীত।