ইউক্রেনের প্রবীণ নাগরিক দিমিত্রো দুবাস ভেবেছিলেন তাঁর যুদ্ধ শেষ। কিন্তু তাঁর নির্ভাবনার গোড়ায় জল ঢেলে দিয়েছে সাম্প্রতিক মার্কিন সতর্কবার্তা। যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে বলেছে, ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে রাশিয়া। দিমিত্রোর পক্ষে মার্কিন সতর্কতা উপেক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমি খুব বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলাম। এমনকি মানসিক চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হয়েছে।’
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক মাস ধরেই সীমান্ত এলাকায় ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার সৈন্যদের সঙ্গে ‘উসকানিমূলক’ আচরণ করছে। বিদেশি সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এমন আচরণ অব্যাহত থকালে ভ্লাদিমির পুতিনের সৈন্যরা কিয়েভের দিক অগ্রসর হবে।
দিমিত্রোও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রাশিয়া হয়তো কিছুদিনের মধ্যে সীমান্তে সৈন্য পাঠাবে এবং আক্রমণ করে বসবে।
দিমিত্রো ২০১৪ সালে স্বেচ্ছাসেবক সৈন্যদের দলে যোগ দিয়েছিলেন। যদিও ২০১৫ সাল থেকে একটি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি চলমান রয়েছে। কিন্তু মাঝে মাঝেই এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকে না। হঠাৎ হঠাৎ সহিংসতা দেখা দেয় এবং যুদ্ধের হুমকি বাড়তে থাকে।
দিমিত্রো এখন বেসামরিক জীবনযাপন করছেন। তিনি মনে করছেন, খারাপ কোনো পরিস্থিতি তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। এ জন্য তিনি প্রস্তুতি হিসেবে তাঁর গাড়িতে জ্বালানি ভরে রেখেছেন এবং প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য কিনে রেখেছেন। তিনি যথাসম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করছেন।
ভ্লাদিমির পুতিন কিয়েভ অবরোধ করবেন এমন আশঙ্কার কথা বলছে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এই আশঙ্কা অবশ্য প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি থেকে শুরু করে ইউক্রেনের প্রায় সব কর্মকর্তা উড়িয়ে দিয়েছেন। তার পরও শহরের স্কুলগুলোতে বিমান হামলা থেকে বাঁচার মহড়া চলছে। জরুরি স্থানান্তরের ‘গ্র্যাব ব্যাগ’ প্রস্তুত করার নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভরে গেছে। ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ এরই মধ্যে পালানোর পরিকল্পনা সাজাতে শুরু করেছে। এমনকি যাঁরা অবসরে আছেন এবং পেনশন ভোগ করছেন, তাঁরাও কিয়েভের বাইরে বনভূমিতে গিয়ে যুদ্ধের মহড়ায় যোগ দিচ্ছেন।
ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ ভেসাল নজরোভ বলেন, ‘পশ্চিমা মিত্ররা অস্ত্র দিয়েছে বলে রুশরা আক্রমণ করবে এমনটা আমি মনে করি না। আমার বিশ্বাস হয় না যে তারা কিয়েভ অব্দি পৌঁছাবে। তার পরও আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’
অন্যদিকে স্থানীয় সের্হি কেলিনিন মনে করেন, পশ্চিমের ভয়ানক নিষেধাজ্ঞার হুমকি পুতিনকে থামিয়ে দেবে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে একমত নন ৬৪ বছর বয়সী আরেক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য। তিনি বলেন, ‘শত্রু আমাদের দুয়ারের কাছে এসে গেছে। আমাদের প্রত্যেককে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।’
ইউক্রেনের বেসরকারি টেলিভিশন প্রিমিয়া টিভির এক খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার প্রায় ১ লাখ সেনা মোতায়েনের বিষয়টি ‘বিশ্বের এক নম্বর’ আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। টেলিভিশনটির উপস্থাপক রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে ‘অননুমেয়’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, পুতিন কখন কী ঘটিয়ে ফেলেন তা বোঝা মুশকিল। তিনি একটি জাতিকে নিজের পছন্দমতো চলতে দিতে চান না। এর আগেও এমন আগ্রাসী আচরণ পূর্ব ইউরোপের সঙ্গে কয়েক দশক ধরেই সাবেক সোভিয়েত নেতারা করেছিলেন।
ইউক্রেনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক বেরেজোভেটস বিবিসিকে বলেন, ‘২০১৪ সালেই আমরা আমাদের পছন্দ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি। আমরা আর রুশ সাম্রাজ্যর অংশ হব না; এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা ন্যাটোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ যদি না-ও থাকে। আমাদের লক্ষ্য পশ্চিমা সভ্যতার অংশ হওয়া, যার অর্থ হচ্ছে আইনের শাসন ও বাকস্বাধীনতা। এসব অর্জনের জন্য ইউক্রেনের মানুষ যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত।’
এমন পিরিস্থিতিতে ইউক্রেনের বয়ষ্ক ব্যক্তিরা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ জায়গায় পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন। একই সঙ্গে তাঁরা পরিকল্পনা করছেন যে যোদ্ধারা কখন, কোথায় মিলিত হবেন এবং কীভাবে নিজেদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করবেন।