প্যারিসের বিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে ফরাসি রাজপরিবারের অমূল্য গয়না চুরির ঘটনায় ফ্রান্সজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রোববার (১৯ অক্টোবর) প্রকাশ্যে সংঘটিত এই দুঃসাহসিক চুরিতে চোরেরা আটটি মহামূল্যবান গয়না নিয়ে গেছে। শুধু অর্থমূল্যই নয়, এসব গয়নার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য অপরিসীম।
পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, চুরিটি সংঘটিত হয় জাদুঘরের গ্যালারি দ্য অ্যাপোলনে, যা ১৬৬১ সালে রাজা চতুর্দশ লুই নির্মাণ করেছিলেন। সোনালি কারুকাজ আর অসাধারণ চিত্রকর্মে সজ্জিত এই হল পরে ভার্সাই প্রাসাদের বিখ্যাত ‘হল অব মিররস’-এর অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল।
জানা গেছে, চোরেরা একটি চেরি পিকার (ট্রাকের ওপর স্থাপন করা মই) ব্যবহার করে ও কাটার যন্ত্রের সাহায্যে কক্ষটিতে ঢোকে। দুঃসাহসিক এই চুরি এতটাই পরিকল্পিত ছিল যে সকালে জাদুঘর খুলে দেওয়ার সময়টিতেই তারা ঢোকে এবং মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে তারা গয়না নিয়ে পালিয়ে যায়।
চুরি হওয়া গয়নাগুলোর মধ্যে রয়েছে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের (প্রথম নেপোলিয়ন) উপহার দেওয়া একটি দুর্লভ পান্না হার। ১৮১০ সালে দ্বিতীয় স্ত্রী মারি-লুইজকে বিবাহ উপলক্ষে এটি তিনি উপহার দিয়েছিলেন। এই হারে রয়েছে ৩২টি পান্না ও ১ হাজার ১৩৮টি হীরা। একই সেটের একটি কানের দুলের জোড়াও চুরি হয়েছে।
এ ছাড়া ফ্রান্সের শেষ রানি মেরি-অমেলির মালিকানাধীন একটি নীলকান্তমণির টায়রাও নিয়ে গেছে চোরেরা। এই টায়রায় ছিল ২৪টি সিলন নীলকান্তমণি ও ১ হাজার ৮৩টি হীরা। টায়রাটির সেট হিসেবে থাকা একটি হার এবং এক জোড়া দুল থেকে একটি দুলও এখন নিখোঁজ।
আরেকটি চুরি হওয়া গয়না হলো সম্রাজ্ঞী ইউজেনির (তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী) একটি টায়রা। এতে ২১২টি মুক্তা ও প্রায় ৩ হাজার হীরা বসানো ছিল। এ ছাড়া ২ হাজার ৪০০ হীরা দিয়ে অলংকৃত একটি বেল্ট এবং ১৮৫৫ সালের একটি সাদা হীরার ব্রোচও চুরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গয়নাগুলোর ক্ষতি শুধু আর্থিক নয়, এটি ফরাসি রাজকীয় ঐতিহ্যের এক অমূল্য অধ্যায়ের লোপ। ফরাসি বিপ্লবের সময় বহু রাজকীয় গয়না হারিয়ে গিয়েছিল; নেপোলিয়ন বোনাপার্টের আমলে সেগুলোর কিছু পুনর্গঠিত হয়। তাই এই চুরি ফরাসি ঐতিহ্যের এক গভীর ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে একটি আশার খবরও এসেছে। সম্রাজ্ঞী ইউজেনির একটি রাজমুকুট ল্যুভর মিউজিয়ামের বাইরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পালিয়ে যাওয়ার সময় চোরেরা এটি ফেলে রেখে যায়। ৫৬টি পান্না ও ১ হাজার ৩৫৪টি হীরায় অলংকৃত এই রাজমুকুট এখন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।