রাশিয়ায় তরুণদের মধ্যে ভয়াবহভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘মলিকিউল’ নামে ওজন কমানোর একটি সস্তা বড়ি। রুশ টিকটকে এই বড়িটি নিয়ে প্রচারণা শুরু হয়েছিল চলতি বছরের শুরুর দিকে। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, তরুণীরা বলছেন—‘মলিকিউল খাও, খাবারের কথা ভুলে যাও’ বা ‘ওজন কমাও, ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে বসো না।’ এই ধরনের প্রচারের ফলেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বড়িটির বিক্রি।
রোববার (২ নভেম্বর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের ২২ বছর বয়সী মারিয়া অনলাইনে বড়িটি কিনে খান। দিনে দুটি করে খেয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁর মুখ শুকিয়ে যায়, ক্ষুধা সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেন, আর মানসিক অস্থিরতা ও উদ্বেগে ভুগতে থাকেন।
মারিয়া বলেন, ‘আমি ক্রমাগত ঠোঁট কামড়াচ্ছিলাম, গাল চিবোচ্ছিলাম—মনে হচ্ছিল কিছু একটা ঠিক নেই।’
টিকটকের অন্য ব্যবহারকারীরাও জানান, বড়ি খাওয়ার পর তাঁদের চোখ বড় হয়ে যাওয়া, হাত কাঁপা ও ঘুমহীনতার মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে। অন্তত তিনজন স্কুলশিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। সাইবেরিয়ার চিতায় এক স্কুলছাত্রী গ্রীষ্মের আগে দ্রুত ওজন কমাতে গিয়ে ওভারডোজে আক্রান্ত হয়। অন্য এক কিশোরকে স্কুলে মোটা বলে ঠাট্টা করা হতো, বন্ধুর মাধ্যমে বড়ি কিনে খেয়ে সে হ্যালুসিনেশনে আক্রান্ত হয়।
রাশিয়ার পত্রিকা ‘ইজভেস্তিয়া’ বড়িটির নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছে, এতে ‘সিবিউট্রামিন’ নামে এক ধরনের নিষিদ্ধ উপাদান রয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে এই ‘সিবিউট্রামিন’ প্রথমে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট হিসেবে তৈরি হলেও পরে ওজন কমানোর ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, এটি হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়—বিপরীতে ওজন কমানোর প্রভাব সামান্য। এ জন্য ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বহু দেশ সিবিউট্রামিন নিষিদ্ধ করে।
রাশিয়ায় ‘সিবিউট্রামিন’ শুধুমাত্র চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে পাওয়া যায়। কিন্তু অনলাইনে নানা অবৈধ বিক্রেতা বেশি মাত্রার ‘সিবিউট্রামিন’ উপাদানসমৃদ্ধ বড়ি বিক্রি করছে। এগুলোর দাম ওজন কমানোর জনপ্রিয় ইনজেকশন ‘ওজেমপিক’ এর তুলনায় অনেক সস্তা।
এ অবস্থায় সরকারি উদ্যোগে কয়েকটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে বড়িটি সরানো হলেও তা ‘অ্যাটম’ নামে নতুন প্যাকেটে আবার ফিরে এসেছে। বিক্রেতারা এখন এসব বড়িকে ‘স্পোর্টস নিউট্রিশন’ তালিকাভুক্ত করছে, যাতে নজর এড়ানো যায়।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, তরুণদের জন্য এই বড়ি প্রাণঘাতী হতে পারে। এন্ডোক্রাইন বিশেষজ্ঞ ক্সেনিয়া সোলোভিয়েভা বলেন, ‘এই ধরনের ওষুধে সক্রিয় উপাদানের পরিমাণ আমরা জানি না—তাই এটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।’