বুচা শহরে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এক রুশ সামরিক কমান্ডারকে শনাক্ত করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলের দপ্তর জানিয়েছে, সাংগঠনিক ও সমন্বিত যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত সেই ব্যক্তিটি আর কেউ নন, তিনি রাশিয়ার ৭৬ তম এয়ার অ্যাসল্ট ডিভিশনের প্লাটুন কমান্ডার ইউরি ভ্লাদিমিরোভিচ কিম।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২২ সালের মার্চ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রুশ বাহিনী কিছু সময়ের জন্য কিয়েভের উপকণ্ঠ বুচা দখল করে রেখেছিল। দখলদার বাহিনী সরে যাওয়ার পর সেখানকার রাস্তায় শিশু ও বৃদ্ধসহ অসংখ্য বেসামরিক মানুষের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। গণকবর, নির্যাতনের চিহ্ন, বেসমেন্টে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া মরদেহ—সব মিলিয়ে বুচা শহরে সংঘটিত বর্বর হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাশিয়ার নৃশংসতার প্রতীক হয়ে ওঠে।
ইউক্রেনের অভিযোগ, বুচায় অন্তত ১৭ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করার জন্য কিম তাঁর প্লাটুনকে নির্দেশ দেন। তাঁর অধীনস্থ সৈন্যদের বিরুদ্ধে আরও চারটি নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। কিম বর্তমানে নিজেদের হেফাজতে না থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে দায় প্রমাণে ইউক্রেনের তদন্তকারীরা বিভিন্ন ধরনের প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
গ্লোবাল রাইটস কমপ্লায়েন্স নামের একটি আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থা ইউক্রেনকে কিমের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহে সহায়তা করছে। সংস্থাটির মতে, কিমের বিরুদ্ধে মামলা দাঁড় করানো হয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য, ফরেনসিক রিপোর্ট, অপরাধস্থলের পুনর্গঠন, শনাক্তকরণ প্যারেড, মানচিত্র এবং ওপেন সোর্স গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে। অভিযোগ রয়েছে—হত্যার প্রমাণ গোপন করতে সৈন্যদের দিয়ে ভুক্তভোগীদের লাশ পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশও দিয়েছিলেন কিম।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই মামলা প্রমাণ করেছে বুচায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা ছিল না, বরং রুশ সামরিক নেতৃত্বের নির্দেশে পরিচালিত একটি সমন্বিত অপরাধ পরিকল্পনার অংশ ছিল।
ইউক্রেন অতীতেও বুচা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন রুশ সৈন্য ও অন্তত একজন কমান্ডারের নাম প্রকাশ করেছে। তবে ইউরি কিম প্রথম কমান্ডার যার বিরুদ্ধে ‘নোটিশ অব সাস্পিশন’ জারি করা হয়েছে—যা পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় রূপ নিতে পারে।
ইউক্রেনের জাতীয় পুলিশের প্রথম উপপ্রধান মাকসিম সুদস্কিরিদজে বলেন, তদন্ত এখন নিম্নপদস্থ অপরাধীদের বাইরে গিয়ে এমন নেতৃত্বকে চিহ্নিত করছে যাদের নির্দেশে সাধারণ সামরিক আদেশ গণহত্যায় পরিণত হয়েছিল।
রাশিয়া বরাবরই বুচায় বেসামরিক নাগরিক হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ক্রেমলিনের দাবি, ইউক্রেন নাকি ঘটনাটি সাজানো ছবি ও ভিডিও দিয়ে তৈরি করেছে।