হোম > বিশ্ব

পারমাণবিক অস্ত্র আধুনিকায়নের নয়া ঢেউ বিশ্বজুড়ে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

ছবি: আল-জাজিরা

পারমাণবিক অস্ত্রধারী ৯ দেশ—রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, উত্তর কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান এবং ইসরায়েল তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার আধুনিকায়নে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাসের দীর্ঘমেয়াদি ধারা ব্যাহত হয়ে বরং অস্ত্র বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের দিকে ঝুঁকছে দেশগুলো। সুইডেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই উদ্বেগজনক বৈশ্বিক চিত্র।

এসআইপিআরআইয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, জানুয়ারি ২০২৫-এর হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে মোট পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১২ হাজার ২৪১টি। এর মধ্যে ৯ হাজার ৬১৪টি রয়েছে সক্রিয় সামরিক মজুদের আওতায়, যা প্রয়োজনে ব্যবহারযোগ্য।

এ ছাড়া, প্রায় ৩ হাজার ৯১২টি ওয়ারহেড স্থাপন করা রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান ব্যবস্থায় এবং প্রায় ২ হাজার ১০০টি রয়েছে ‘হাই অপারেশনাল অ্যালার্ট’-এ, অর্থাৎ, তাৎক্ষণিক ব্যবহারের উপযোগী। এসব অধিকতর সক্রিয় অস্ত্রের বেশির ভাগই রয়েছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে।

স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পেলেও বর্তমানে সেই প্রবণতা থেমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বরং, নতুন ওয়ারহেড সংযোজন এবং পুরাতন অস্ত্রব্যবস্থার আধুনিকায়ন লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। এসআইপিআরআইয়ের পারমাণবিক অস্ত্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হ্যান্স এম. ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘পরমাণু অস্ত্র হ্রাসের যে যুগটি দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছিল, তা শেষ হয়ে এসেছে। এখন আমরা প্রত্যক্ষ করছি অস্ত্রভান্ডার বৃদ্ধির সুস্পষ্ট প্রবণতা, কূটনৈতিক নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং যুদ্ধোন্মুখ বক্তব্যের পুনরুত্থান।’

বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ পারমাণবিক অস্ত্রের মালিকানা রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। যদিও ২০২৪ সালে তাদের অস্ত্রের সামরিক স্টকপাইল বা মজুত মোটামুটি অপরিবর্তিত ছিল, তবে দুই দেশই বিস্তৃত ও দীর্ঘমেয়াদি আধুনিকায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এসআইপিআরআইয়ের তথ্যমতে, পারমাণবিক ওয়ারহেডের হিসাবে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রাশিয়া। দেশটির কাছে আছে ৪ হাজার ৪৭৯টি ওয়ারহেড। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের আছে ৩ হাজার ৭০৮টি।

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পর এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে চীন। সংস্থাটি বলছে, অবস্থানের দিক থেকে ৩ নম্বরে থাকলেও চীনের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক গতিশীল। এসআইপিআরআইয়ের অনুমান, ২০২৫ সালের শুরুতে চীনের ওয়ারহেড সংখ্যা অন্তত ৬০০। সত্যিই যদি এই পরিমাণ ওয়ারহেড বর্তমানে চীনের কাছে থেকে থাকে, তাহলে ২০২৩ সাল থেকে প্রতিবছর গড়ে ১০০টি ওয়ারহেড বাড়িয়েছে দেশটি।

দেশটি উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মরুভূমি ও পাহাড়ি এলাকায় ইতিমধ্যে প্রায় ৩৫০টি নতুন আইসিবিএম (ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল বা আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র) সাইলো নির্মাণ করেছে। চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে চীন ২০৩৫ সালের মধ্যে ১ হাজার ৫০০ ওয়ারহেড করবে।

তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটির ভান্ডারে রয়েছে ২৯০টি ওয়ারহেড। ফ্রান্স ২০২৪ সালে তৃতীয় প্রজন্মের এসএসবিএন (ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম সাবমেরিন), নতুন ক্রুজ মিসাইল এবং উন্নত ব্যালিস্টিক মিসাইল ও ওয়ারহেড নির্মাণে অগ্রসর হয়েছে। এই আধুনিকায়নের উদ্দেশ্য পারমাণবিক প্রতিরোধক্ষমতাকে আরও কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য করা। ফরাসি সরকার দীর্ঘ মেয়াদে ২০৪০ সালের পর পর্যন্ত এই সক্ষমতা বজায় রাখার লক্ষ্য নিয়েছে। তাদের নীতি অস্ত্রের সংখ্যা না বাড়িয়ে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো।

ফ্রান্সেরই পর অবস্থান যুক্তরাজ্যের। দেশটির কাছে রয়েছে ২২৫টি ওয়ারহেড। ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্য চারটি নতুন ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন নির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলেও প্রকল্পটি বড় ধরনের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। লেবার সরকার তাদের ‘কন্টিনিউয়াস অ্যাট-সি ডিটারেন্স’ নীতি বজায় রাখতে চায় এবং অস্ত্রভান্ডারের সীমা বাড়ানোর আগের পরিকল্পনা বহাল রেখেছে। তবে বাজেট ঘাটতি ও নির্মাণ জটিলতা এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটাতে পারে।

১৮০ ও ১৭০টি ওয়ারহেড নিয়ে তালিকার ষষ্ঠ ও সপ্তম স্থানে যথাক্রমে আছে ভারত ও পাকিস্তান। ভারত ২০২৪ সালে অস্ত্রের সংখ্যা সামান্য বাড়ায়েছে এবং নতুন ধরনের ‘ক্যানিস্টারাইজড’ ক্ষেপণাস্ত্র (মূলত একটি ক্ষেপণাস্ত্রকে কন্টেইনারে করে পরিবহনযোগ্য করে তোলা এবং সেই কন্টেইনারকেই ক্ষেপণাস্ত্রটির নিক্ষেপণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করার ধারণা নিয়েই তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে ক্যানিস্টারাইজড ক্ষেপণাস্ত্রকে) উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে একাধিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম হতে পারে। পাকিস্তান একই সঙ্গে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি উন্নয়ন ও ফিসাইল উপাদান সঞ্চয়ের মাধ্যমে অস্ত্রভান্ডার সম্প্রসারণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার কাছে আছে প্রায় ৫০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড এবং আরও ৪০টি বোমা তৈরির মতো ফিসাইল উপাদান তাদের হাতে রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দেশটি এখন একটি ‘ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার অস্ত্র’ ব্যবস্থার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ ধরনের অস্ত্র ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়, যা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ঘোষণা দেন যে, পারমাণবিক কর্মসূচিতে দেশটি ‘সীমাহীন সম্প্রসারণ’ চালিয়ে যাবে। এ ঘোষণার পর থেকে তারা পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনে গতি বাড়িয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

তালিকায় সবার শেষে অবস্থান ইসরায়েলের। ইসরায়েল কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও তাদের পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলেই ধারণা করা হয়। ২০২৪ সালে তারা জেরিকো ক্ষেপণাস্ত্রের একটি প্রপালশন সিস্টেম পরীক্ষা করে, যা পারমাণবিক বহনে সক্ষম বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া, তাদের ডিমোনা পারমাণবিক স্থাপনায়ও কিছু উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চালানো হয়। এসব কর্মকা ইসরায়েলের পারমাণবিক সক্ষমতা আধুনিকীকরণের ইঙ্গিত দেয়।

এসআইপিআরআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিসমূহের অনুপস্থিতি, কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং যুদ্ধোন্মুখ বক্তব্য বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য এক গভীর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অস্ত্র প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকলে সামান্য উত্তেজনাও অপ্রত্যাশিত পারমাণবিক সংকটে রূপ নিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে পারমাণবিক অস্ত্র বাড়ানো এবং আধুনিকায়নের প্রবণতা রোধে কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

আরও খবর পড়ুন:

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

শান্তির জন্য ন্যাটোর আশা ছাড়ার ইঙ্গিত দিল ইউক্রেন

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেঁচে ফেরা ২ শিক্ষার্থী বেঁচেছিলেন স্কুল জীবনেও

বন্ডাই বিচে গুলির শব্দকে শুরুতে আতশবাজি ভেবেছিলেন অনেকে

ভারতে বসে বাংলাদেশে সন্ত্রাস— ঢাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান দিল্লির

বন্ডাই বিচে সন্ত্রাসী হামলায় শনাক্ত কে এই নাভিদ আকরাম

লিংকডইনে গার্লফ্রেন্ড চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর যা ঘটল

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১১

এইচ–১বি ভিসা ফি বৃদ্ধি: ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২০ অঙ্গরাজ্যের মামলা