সাবেক পেন্টাগন কর্মকর্তা মাইকেল রুবিন দাবি করেছেন, পাকিস্তানের ‘চাটুকারিতা’ ও ‘ঘুষে’ যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘চরম অযোগ্যতার’ কারণেই ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুবিন জানান, ট্রাম্পের আচরণে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা ‘হতবাক’। কারণ তাঁর নীতির ফলে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্ক উল্টো দিকে ঘুরে গেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এর পেছনে কী ‘পাকিস্তানের চাটুকারিতা, নাকি ঘুষ’ কাজ করেছে?
রুবিন বলেন, ‘আমাদের অনেকেই এখনো বুঝে উঠতে পারছি না, কীভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ককে নষ্ট করে দিলেন। অনেকেই প্রশ্ন করেন, তিনি আসলে কিসে প্ররোচিত হলেন। হয়তো পাকিস্তানের তোষামোদ। অথবা পাকিস্তান বা তাদের পৃষ্ঠপোষক তুরস্ক ও কাতারের ঘুষ ট্রাম্পকে প্রভাবিত করেছে... কিন্তু এটি এমনই এক ভয়াবহ ঘুষ, যার বোঝা আমেরিকাকে দশকের পর দশক কৌশলগত ঘাটতির মুখে ফেলবে।’
রুবিন আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে রুশ তেল কেনা নিয়ে ‘শিক্ষা দেওয়ার’ চেষ্টা করছে। অথচ ওয়াশিংটন নিজেই মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্য করছে—এটা ‘ভন্ডামি’। তিনি জানান, ভারতের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নয়াদিল্লির অবস্থান যৌক্তিক।
রুবিন বলেন, ‘আমেরিকানরা কী বোঝেন না, যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভারতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যই তাঁরা নির্বাচিত করেছেন। ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। খুব শিগগিরই ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাশিয়া ছাড়া আমাদের বিকল্প বাজার নেই। তাই যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া থেকে জিনিসপত্র কিনতে বাধ্য। এই অবস্থায় ভারতকে রুশ পণ্য কিনতে বাধা দেওয়া এক ধরনের ভন্ডামি।’
তিনি বলেন, ‘ভারতকে উপদেশ দেওয়ার বদলে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত কম দামে জ্বালানি সরবরাহ করা। যদি আমরা তা দিতে না পারি, তবে সবচেয়ে ভালো চুপ থাকা। কারণ ভারতকে সবার আগে তার নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে হয়।’
উল্লেখ্য, ট্রাম্প চলতি বছরের আগস্টে ভারতের বেশির ভাগ পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল, নয়াদিল্লির রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখা।’
এদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৪ ডিসেম্বর ভারত পৌঁছান ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে। নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই শীর্ষ বৈঠকে জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী মোদি পুতিনকে ভারতের প্রতি তাঁর ‘অটল অঙ্গীকারের’ জন্য ধন্যবাদ জানান।
পুতিন মোদিকে বলেন, ‘রাশিয়া ভারতের জ্বালানি খাত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় তেল, গ্যাস, কয়লা এবং সব ধরনের সম্পদের নির্ভরযোগ্য জোগানদাতা। দ্রুতবর্ধনশীল ভারতীয় অর্থনীতির জন্য আমরা অবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত।’ শুক্রবার রাতে পুতিন ভারতের সফর শেষ করেন।