বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) প্রতিষ্ঠাতা লালু প্রসাদ যাদবের মেয়ে রোহিনী আচার্য পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি রাজনীতি ছাড়ারও ঘোষণা দিয়েছেন। আজ রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা পোস্টে তিনি বলেছেন, তাঁকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, রোহিনী আচার্য অভিযোগ করেছেন—তাঁকে জঘন্য ভাষায় গালাগাল করা হয়েছে, এমনকি তাঁকে মারতে স্যান্ডেল পর্যন্ত তোলা হয়েছিল। পোস্টে রোহিনী বিহার বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডির ভরাডুবির জন্য তাঁর ভাই তেজস্বী যাদবের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী সঞ্জয় যাদব ও রমিজকে দলের পরাজয়ের জন্য দায়ী করেন। তিনি জানান, তিনি ‘রাজনীতি ছাড়ছেন’ এবং নিজ পরিবারকেও ‘ত্যাগ করছেন’।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আবেগঘন পোস্টে রোহিনী লিখেছেন, ‘গতকাল এক মেয়ে, এক বোন, এক বিবাহিত নারী ও এক মাকে অপমান করা হয়েছে, তাঁকে জঘন্য গালাগাল দেওয়া হয়েছে, তাঁকে মারার জন্য স্যান্ডেল তোলা হয়েছে। আমি আত্মসম্মানের সঙ্গে আপস করিনি, আমি সত্য ত্যাগ করিনি। আর শুধু এই কারণে আমাকে এই অপমান সহ্য করতে হলো।’
রোহিনী আচার্য আরও লেখেন, ‘গতকাল এক মেয়ে বাধ্য হয়ে কান্নারত মা–বাবা আর বোনদের পেছনে রেখে চলে এসেছে। তাঁরা আমাকে আমার পৈতৃক ভিটা থেকে বিচ্ছিন্ন করে বের করে দিয়েছে…আমাকে অনাথ করে দিয়েছে।’
কয়েক মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় পোস্টে রোহিনী অভিযোগ করেন, তাঁকে বলা হয়েছে—তিনি তাঁর বাবাকে (লালু প্রসাদ যাদব) কিডনি দান করার বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন, এমনকি ওই কিডনি দানের সূত্রে লোকসভা নির্বাচনের টিকিটও পেয়েছেন। তাঁর ভাষায়, ‘গতকাল আমাকে অভিশাপ দেওয়া হয়েছে, ‘‘নোংরা’’ বলা হয়েছে, বাবাকে কিডনি দান করে কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। কিডনির বিনিময়ে লোকসভার টিকিট কিনেছি—এসব বাজে কথা শুনতে হয়েছে।’
৪৬ বছর বয়সী চিকিৎসক রোহিনী বর্তমানে চিকিৎসা পেশা ছেড়ে গৃহিণীর ভূমিকায় নিজেকে সীমাবদ্ধ করেছেন এবং সিঙ্গাপুরে স্বামীর সঙ্গে স্থায়ী হয়েছেন। তবে তিনি গত বছর বিহারের সারণ আসন থেকে লোকসভা নির্বাচন করে হেরে যান। গতকাল শনিবার রাজনৈতিক জীবন ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি রাজনীতি ছাড়ছি এবং পরিবারকে ত্যাগ করছি। সঞ্জয় যাদব ও রমিজই আমাকে এটা করতে বলেছে আর আমি সব দোষ নিজের ওপর নিচ্ছি।’
সঞ্জয় আরজেডি থেকে নির্বাচিত এমপি। রমিজ উত্তর প্রদেশের একটি রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হলেও খুব বেশি পরিচিত নন। দুজনেই তেজস্বী যাদবের ঘনিষ্ঠ। তাঁরা এ ঘটনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
পরে গণমাধ্যমকে রোহিনী বলেন, ‘আমার কোনো পরিবার নেই। পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে তেজস্বী যাদব, সঞ্জয় যাদব আর রমিজের কাছে যান। তারাই আমাকে পরিবার থেকে বের করে দিয়েছে। তারা কোনো দায় নেয় না। পুরো দেশ জানতে চাইছে দল এত খারাপ করল কেন। আর আপনি যদি সঞ্জয় যাদব বা রমিজের নাম নেন, আপনাকে অপমান করা হয়, দল থেকে বের করে দেওয়া হয়, গালাগাল করা হয়।’
জল্পনা আছে—এ বছর মে মাসে লালু প্রসাদের বড় ছেলে তেজ প্রতাপ যাদবকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘটনায় রোহিনীর মধ্যে ক্ষোভ জমেছিল। তবে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে তাঁকে তেজস্বী যাদবের পক্ষে সক্রিয় দেখা গেছে। বিহার বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডির অবস্থান অত্যন্ত শোচনীয়। দলের আসন ৭৫ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৪-এ এবং মহাগাঠবন্ধন জোট মিলে ৩৫টি আসন পেয়েছে।
এদিকে রোহিনীর এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বিজেপি আরজেডি ও লালু যাদবকে আক্রমণ করে বলেছে, এটি লালুর ‘পিতৃতান্ত্রিক ও নারীবিদ্বেষী মানসিকতার’ প্রতিফলন। বিজেপি নেতা অমিত মালব্য অভিযোগ করেছেন, বাবাকে কিডনি দান করা সত্ত্বেও রোহিনীকে পাশে না রেখে তেজস্বীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
বিজেপি এমপি নিশিকান্ত দুবে তেজস্বীকে ব্যঙ্গ করে আওরঙ্গজেবের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যে নাকি ক্ষমতা দখলের জন্য নিজের বাবা শাহজাহানকে বন্দী করেছিল এবং বড় ভাই দারা শিকোকে সরিয়ে দিয়েছিল।