সপ্তাহজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী রোসেন জেলিয়াজকভ তাঁর সরকারের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পার্লামেন্টে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের ঠিক কয়েক মিনিট আগে টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে জেলিয়াজকভ তাঁর পদত্যাগের ঘোষণা দেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনস্বার্থবিরোধী অর্থনৈতিক নীতি ও দুর্নীতি দমনে ব্যর্থতার অভিযোগে সপ্তাহ ধরে এ বিক্ষোভ চলছিল।
টেলিভিশনে দেওয়া বিবৃতিতে ঝেলিয়াজকভ বলেন, ‘আমরা জোটের বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ এবং আমাদের করণীয় সিদ্ধান্তগুলো আলোচনা করেছি। জনগণ আমাদের কাছ থেকে যে দায়িত্বশীলতার প্রত্যাশা করে, আমরা সে উচ্চতায় থাকতে চাই। ক্ষমতা আসে জনগণের কণ্ঠ থেকে।’
কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানী সোফিয়া ছাড়াও দেশজুড়ে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সরকারের অর্থনৈতিক নীতি জনস্বার্থবিরোধী, উচ্চকর ও সামাজিক নিরাপত্তা অবদানের প্রস্তাব জনগণের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে এবং বছরের পর বছর চলা দুর্নীতি দমনে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
গত সপ্তাহে সরকার তাদের ২০২৬ সালের বাজেট প্রস্তাব করে, যেখানে প্রথমবারের মতো ইউরো মুদ্রায় খসড়া করা হয়েছিল। তবে বিক্ষোভের কারণে সরকার তা প্রত্যাহার করে নেয়। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তায় নাগরিক ব্যয় বাড়ানো এবং লভ্যাংশের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপের পরিকল্পনা ছিল।
তবে বাজেট প্রত্যাহারের পরও বিক্ষোভ থামেনি। গত চার বছরে দেশটিতে সাতটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সর্বশেষ ২০২৪ সালের অক্টোবরে। রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজন বুলগেরিয়ার সংকট আরও গভীর করেছে।
এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট রুমেন রাদেভ সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানান। আজ বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘জনগণের কণ্ঠ আর মাফিয়ার ভয়ের মাঝে—জনগণের কণ্ঠই শুনুন। রাস্তায় যে স্লোগান উঠছে, তার প্রতিধ্বনি শুনুন।’
বুলগেরিয়ার সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত। এখন তিনি সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নতুন সরকার গঠনের চেষ্টা করবেন। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে নতুন সরকার গঠন কঠিন হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আর যদি দলগুলো নতুন সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে প্রেসিডেন্ট একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করবেন এবং দেশে আবারও নতুন নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।