দিল্লির লাল কেল্লার কাছে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত উমর মুহাম্মদের কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বিস্ফোরণের আগে উমর মুহাম্মদ তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কাছাকাছি একটি পার্কিং লটে গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি তদন্তকারীদের নতুন তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, উমর মুহাম্মদ গাড়ি বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য প্রথমে লাল কেল্লার পার্কিং এলাকাকে বেছে নিয়েছিলেন, যেখানে শীতকালে ব্যাপক ভিড় থাকে। তবে তাঁর সহযোগী গ্রেপ্তার ও বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধারের পরে হতাশায় থাকা উমর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যান—সোমবার লাল কেল্লা বন্ধ থাকে। তিনি যখন পার্কিং লটে পৌঁছান, তখন সেখানে কোনো ভিড় ছিল না। বিষয়টি উমরকে হতাশ করে এবং তিনি কী করবেন, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েন।
তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি নেতাজি সুভাষ মার্গের দিকে গাড়ি নিয়ে যান, যা একদিকে লাল কেল্লা এবং অন্যদিকে চাঁদনি চকের পাশ দিয়ে গেছে। এরপর লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে একটি ট্রাফিক সিগন্যালেই গাড়িটি বিস্ফোরিত হয়।
ফরিদাবাদ থেকে লাল কেল্লা, উমরের পথ অনুসরণ
প্রায় ৬০০ পুলিশ সদস্য ১ হাজারের বেশি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে উমর মুহাম্মদের সাদা রঙের হুন্ডাই আই-২০ গাড়িটির গতিবিধি শনাক্ত করেছেন।
গাড়িটি সোমবার সকালে ফরিদাবাদের আল ফালাহ ইউনিভার্সিটি থেকে রওনা হয়। সকাল ৮টা ১৩ মিনিটে এটি হরিয়ানা-দিল্লি সীমান্তে বাদরপুরের টোল প্লাজা অতিক্রম করে। এরপর ময়ূর বিহার এবং কনট প্লেস হয়ে লাল কেল্লার কাছাকাছি পার্কিংয়ে পৌঁছায়।
এই দীর্ঘ যাত্রার মধ্যে তিনি পুরোনো দিল্লির কাছে আসফ আলী রোডে প্রায় আধা ঘণ্টা বিরতি নেন। সিসিটিভি ফুটেজে তাঁকে গাড়িতে একা বসে থাকতে দেখা যায়। সংক্ষিপ্ত বিরতির পর তিনি আবার ড্রাইভ শুরু করে পার্কিং লটে যান।
কনট প্লেস কি লক্ষ্য ছিল
দিল্লিতে প্রবেশের পর উমর যে পথটি নিয়েছিলেন, তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। বাদরপুর টোল বুথ থেকে তিনি প্রথমে ময়ূর বিহারের দিকে যান, যেখানে দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ স্থান অক্ষরধাম মন্দির অবস্থিত। সেখান থেকে সরাসরি পুরোনো দিল্লিতে না এসে তিনি পথ পরিবর্তন করে দিল্লির প্রাণকেন্দ্র কনট প্লেসে যান।
তদন্তকারীরা কনট প্লেস থেকে সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করছেন এই সন্দেহে যে কনট প্লেস কি হামলার লক্ষ্য ছিল?
উমর সকাল ৮টার পরপরই দিল্লিতে প্রবেশ করলেও বিস্ফোরণ ঘটে প্রায় ১১ ঘণ্টা পরে। দীর্ঘ এই সময়ে পথ পরিবর্তন এবং তিন ঘণ্টা পার্কিং লটে কাটানো—এসবের পেছনে কোনো নির্দেশের জন্য অপেক্ষা, নাকি লক্ষ্য ঠিক করার দ্বিধা কাজ করছিল, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
উমরের ফোন নিয়ে বড় প্রশ্ন
পুলিশ জানতে পেরেছে, উমরের ফোনটি বিস্ফোরণের ১০ দিন আগে অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর থেকে বন্ধ ছিল এবং এটির শেষ অবস্থান ছিল আল ফালাহ ইউনিভার্সিটি। উমরের যাত্রাপথের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাঁকে একবারও ফোন ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
এ থেকে প্রশ্ন উঠেছে, ফোন ব্যবহার বা বহন না করা কি পরিকল্পনার অংশ ছিল? কোনো ধরনের সন্দেহ এড়াতে তাঁকে ফোন না রাখতে বলা হয়েছিল কি না? অন্য প্রশ্নটি হলো, ফোনের সংযোগ ছাড়া তিনি অন্যদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ রাখছিলেন? তবে কি উমর অন্য কোনো ফোন ব্যবহার করছিলেন? তদন্তকারীরা এ বিষয়েও খতিয়ে দেখছেন।
পার্কিং লটের ৩ ঘণ্টার রহস্য
পার্কিং লটে উমরের তিন ঘণ্টার অপেক্ষা অনেক প্রশ্ন তুলেছে। কিছু রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এই সময়ে তিনি ফরিদাবাদে বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধার ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারের খবর পড়ছিলেন। তবে এটি তাঁর ওপর কী প্রভাব ফেলেছিল, তা জল্পনার বিষয়।
ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রগুলো দাবি করছে, বিস্ফোরণটি আতঙ্ক থেকে ঘটানো হয়েছে। তাদের যুক্তি, বিস্ফোরকগুলো সঠিকভাবে একত্র করা হয়নি, ফলে এর প্রভাব সীমিত হয়েছে। এই আতঙ্ক ফরিদাবাদে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ২ হাজার ৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার এবং উমরের সহযোগী গ্রেপ্তারের ফল হতে পারে।
তবে এ মুহূর্তে এগুলো সবই অনুমান, তদন্তই কেবল ঘটনার সম্পূর্ণ শৃঙ্খল উন্মোচন করতে পারবে।