হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

সিরিয়ায় হঠাৎ অস্ত্র হাতে আসাদের অনুগামীরা, লড়াইয়ে বহু হতাহতের আশঙ্কা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

আসাদের অনুগামীদের মোকাবিলায় গোলযোগপূর্ণ শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সিরিয়ার বাহিনী। ছবি: সিএনএন

বাশার আল-আসাদের পতন হলে সিরিয়ায় নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাতে সিএনএন জানিয়েছে, দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে।

বিবিসির তথ্যমতে, এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতও অসংখ্য।

স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সিরিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের লাতাকিয়া ও তার্তুস অঞ্চলে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ওই এলাকাগুলোতে সিরিয়ার আলাওয়ি সম্প্রদায়ের মধ্যে আসাদের ব্যাপক সমর্থন ছিল। তবে তিন মাস ধরে সেখানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চলছে।

আসাদের পরিবারও সিরিয়ার সংখ্যালঘু আলাওয়ি সম্প্রদায়ের। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে এই পরিবার সিরিয়া শাসন করেছে। তবে গত বছর সুন্নি ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের হাতে ক্ষমতাচ্যুত হন বাশার আল-আসাদ। বর্তমানে বিদ্রোহীরা দেশটির রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক কাঠামো পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে।

সিএনএন জানিয়েছে, সিরিয়ার জনসংখ্যার মাত্র ১০ ভাগ আলাওয়ি সম্প্রদায়ভুক্ত। গত ডিসেম্বরে আসাদের পতনের পর অনেকে অস্ত্র সমর্পণ করলেও এখনো বহু আলাওয়ি গোষ্ঠী অস্ত্র ছাড়তে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।

নতুন সংঘর্ষের ঘটনা সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে; বিশেষ করে অস্ত্রধারী বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা একটি সংকটপূর্ণ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে সবার সচেতনতা ও শৃঙ্খলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

সিরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ ও বিশৃঙ্খল জনতা উপকূলের দিকে অগ্রসর হয়।’

সিরিয়ার বর্তমান গোয়েন্দা প্রধান আনাস খাত্তাব দাবি করেছেন, এই হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পেছনে সাবেক আসাদ সরকার-সমর্থিত সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর নেতারা রয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বাসঘাতক এই হামলায় আমাদের সেনাবাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশের বহু সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ পোশাক পরা তরুণদের মাঝেও ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের গাড়ির পাশে কয়েকজন নিহত পড়ে আছে। সিএনএন দ্বারা জিওলোকেট করা আরেকটি ভিডিওতে আল-জিন্দেরিয়া শহরের কাছে একটি গ্রামে অন্তত ২০ জন সাধারণ পোশাকধারী ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় দেখা গেছে।

এ ঘটনায় সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল হাসান আবদেল গানি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীরা এখন পাহাড়ে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু তাদের জন্য একমাত্র গন্তব্য আদালত, যেখানে তারা বিচারের মুখোমুখি হবে।’

তিনি আসাদ-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘একটি হারানো যুদ্ধে জ্বালানি হবেন না। সিদ্ধান্ত নিন—অস্ত্র সমর্পণ করুন, নয়তো নিজের ভাগ্য মেনে নিন।

আজ শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সামরিক বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যকে লাতাকিয়া ও তার্তুস অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। তার্তুস শহরে শনিবার পর্যন্ত কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে।

ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী উপকূলীয় শহর জাবলেতে প্রবেশ করেছে। এটি রাশিয়ার হেমেইমিম বিমানঘাঁটির কাছাকাছি অবস্থিত। সেখানে সংঘর্ষের পাশাপাশি আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে।

আরেকটি ভিডিওতে সরকার বাহিনীকে আসাদ পরিবারের শহর আল-কুরদাহাতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। সেখানেও বিস্ফোরণ ও আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে। জাবলের উপকূলীয় এলাকায় একটি সামরিক হেলিকপ্টার থেকে স্বল্প পরিসরের বোমা নিক্ষেপের দৃশ্যও ধারণ করা হয়েছে।

এই অবস্থায় আজ এক বিবৃতিতে সকল বেসামরিক নাগরিককে সামরিক ও নিরাপত্তা অভিযান চলমান এলাকাগুলো থেকে দূরে থাকার অনুরোধ করেছে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, লাতাকিয়া ও তার্তুসের গ্রামীণ এলাকার ৬টি হাসপাতাল বৃহস্পতিবার রাতে হামলার শিকার হয়। সেখানে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় সাংবাদিক আবদুর রহমান তালেব জানান, বৃহস্পতিবার লাতাকিয়ায় সংঘর্ষ কাভার করার সময় তিনি আসাদ-সমর্থকদের হামলার শিকার হন। তিনি বলেন, ‘আমরা লাতাকিয়ার একটি এলাকায় ১২ ঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ ছিলাম। সেখানকার চারদিকে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা অবস্থান করছিল। আমি ভাবতেই পারিনি, আমরা জীবিত বের হতে পারব।’

এই সহিংসতার ঘটনায় সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে সরকারপন্থী ও বিরোধী—উভয় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। সিরিয়ার নতুন সরকারের অন্যতম প্রধান সমর্থক সৌদি আরব এই হামলাকে ‘অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর সংগঠিত অপরাধ’ বলে নিন্দা জানিয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সিরিয়ায় এই সহিংসতা দেশটির নতুন সরকারের জন্য একটি বড় সংকেত। সাবেক শাসকের সমর্থকদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ শুধু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জই নয়, বরং এটি দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

রাশিয়ার পক্ষে খেলবেন ইউক্রেনীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সোফিয়ার, বাতিল হচ্ছে সব পুরস্কার

তিন বাহিনীর প্রধান হয়েই পাকিস্তানকে ‘অনন্য উচ্চতায়’ পৌঁছানোর ঘোষণা আসিম মুনিরের

ইসরায়েলকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ায় ইউরোভিশন বয়কট ৪ দেশের

খুবই সাধারণ খাবার খান পুতিন, দেশে-বিদেশে খাদ্যতালিকায় যা থাকে

মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে বলল স্টেট ডিপার্টমেন্ট

আরও ক্ষমতাধর আসিম মুনির, হলেন পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রথম প্রধান

যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জ্বালানি কিনতে পারলে, ভারত কেন পারবে না—প্রশ্ন পুতিনের

ইন্ডিগোতে ফ্লাইট বিপর্যয়: এক দিনে বাতিল ৫৫০-এর বেশি ফ্লাইট

গাজায় হামাসবিরোধী ইসরায়েলি প্রক্সি গোষ্ঠীর নেতা ইয়াসির আবু শাবাব নিহত, কে তিনি

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন