তুরস্ক ও সিরিয়ায় স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পাঁচ দিন পরে মৃত্যুর সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে। অলৌকিকভাবে বেশ কয়েকটি জীবিত উদ্ধারের ঘটনা ঘটলেও এখন আর জীবিত উদ্ধারের আশা নেই বলে মনে করছেন উদ্ধারকারীরা। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি আজ রোববার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতে গতকাল বলেছেন, তুরস্কে মৃত্যু বেড়ে ২৪ হাজার ৬১৭ জনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে সিরিয়ায় মৃত্যু দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫০০ জনে। সব মিলিয়ে উভয় দেশের মৃতের সংখ্যা ২৮ হাজার ১১৭তে পৌঁছেছে।
তুরস্ক থেকে তিনটি উদ্ধারকারী দল বিবিসিকে বলেছে, দক্ষিণ তুরস্কে লুটপাট ও সংঘর্ষের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। জার্মানি থেকে আসা উদ্ধারকারী দল ও অস্ট্রিয়ার সেনাবাহিনী গতকাল তাদের উদ্ধার অভিযান স্থগিত করেছে। তারা বলেছে, এখানে স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। তবে গোষ্ঠীগুলোর নাম উল্লেখ করেনি তারা।
একজন উদ্ধারকারী বলেছেন, খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা আরও খারাপ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, লুটপাটের অভিযোগে গতকাল অন্তত ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকটি বন্দুকও জব্দ করেছে পুলিশ।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, তিনি প্রয়োজনে আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করবেন। যারা লুটপাটের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অস্ট্রিয়ার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিয়েরে কুগেলওয়েস গতকাল বলেছেন, তুরস্কের হাতায় প্রদেশে অজ্ঞাত গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের কারণে অস্ট্রিয়ান ফোর্সেস ডিজাস্টার রিলিফ ইউনিটের কর্মীরা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে একটি বেস ক্যাম্পে আশ্রয় চেয়েছেন।
গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। পরিদর্শনকালে তিনি বলেছেন, আমরা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছি। এর অর্থ হচ্ছে, যারা লুটপাট ও অপহরণের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্কের গাজিয়ানটেপ শহরের কাছে ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরতায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল গাজিয়ানটেপ প্রদেশের নুরদাগি থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্ব দিকে ছিল। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভূমিকম্পের পর অন্তত ১০০ পরাঘাত (আফটার শক) অনুভূত হয়েছে। ইউএসজিএস জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে পরাঘাতের মাত্রা ছিল ৪ বা তার চেয়ে একটু বেশি।
এর আগে ১৯৯৯ সালে তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।