পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরভস্ক নিয়ে লড়াই এখনো চলছে। অথচ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি দাবি করেছিলেন, শহরটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেন বলছে, পুতিনের ওই দাবি সত্য নয়। শহরের উত্তরাংশ এখনো তাদের হাতে রয়েছে এবং তারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, পোকরভস্ক শহরটি দীর্ঘ সময় ধরে ইউক্রেনীয় সেনাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ রসদ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু গত প্রায় ১৮ মাস ধরে এই শহরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে এবং শহরটি এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
বিবিসি আরও জানায়, একটি কমান্ড পোস্টে ড্রোন ফিড দেখে শহরটির রুশ অবস্থানে আঘাত হানতে রেডিওর মাধ্যমে নির্দেশ দিচ্ছে ইউক্রেনের সেনারা। স্কালা অ্যাসল্ট রেজিমেন্টের কমান্ডার ইউরি সাংবাদিকদের একটি ড্রোন ফুটেজে দেখিয়েছেন, তাদের সৈন্যরা এখনো শহরের উত্তর অংশে ইউক্রেনের পতাকা ওড়াচ্ছে। ইউরি বলেন, ‘আমরা আমাদের ভূমি এভাবে ছেড়ে দেব না। যদি আমরা প্রতিরোধ না দেখাই, বিশ্ব আমাদের প্রতি আস্থা হারাবে।’
২৫ বছর বয়সী ইউক্রেনের এক ব্যাটালিয়ন কমান্ডার সাশা। একটি মানচিত্রে প্লাস্টিকের খেলনা সৈন্য বসিয়ে তিনি দেখালেন—কোথায় ইউক্রেনের বাহিনী এখনো অবস্থান করছে, আর কোথায় রুশ বাহিনী অগ্রসর হয়েছে। তিনি জানান, রুশ সেনারা কখনো কখনো ছদ্মবেশে, দুই থেকে চারজনের দলে আড়াল-আবডালে সামনে এগোনোর চেষ্টা করছে।
রুশ বাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়লেও তাদের লোকবল এখনো বেশি। ‘র্যাবিট’ নামে পরিচিত এক ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত রুশদের নথিপত্র দেখিয়ে বলেন, ‘আমরা তাদের অনেককে মেরে ফেলেছি। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়।’
সহযোদ্ধাদের কাছে ‘ঘোস্ট’ নামে পরিচিত আরেক সৈন্য জানালেন, পরিস্থিতি চাপের হলেও এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি রাশিয়ার পোকরভস্ক শহর দখলের দাবিকে একটি ‘মিথ্যা প্রচারযুদ্ধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মুখ সমরে সবচেয়ে বড় আতঙ্ক এখন ড্রোন। ‘খোতাবিচ’ ছদ্মনামে পরিচিত ইউক্রেনের আরেক সেনা জানিয়েছেন, রুশ ড্রোনগুলোতে থার্মাল ক্যামেরা আছে, যা রাতেও লক্ষ্যভেদ করতে পারে। তাই তাদের জন্য কুয়াশা, বৃষ্টি—এগুলোই ‘ভালো আবহাওয়া’। কারণ এমন আবহাওয়ায় ড্রোন ওড়ানো কঠিন হয়।
বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, এখনো পুরোপুরিভাবে পোকরভস্কের পতন হয়নি এবং ইউক্রেন এখনো তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে। শহরটিতে ইউক্রেনের যেসব সৈন্য লড়ছে—তারা এখন যুদ্ধেই মনোযোগী। শান্তি আলোচনার প্রশ্নে তাদের বেশির ভাগই নীরব। ইউক্রেনের হয়ে সেখানে লড়াইরত এক লাটভিয়ান স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘যদি ইউক্রেন হেরে যায়, তাহলে পরের লক্ষ্য হবে আমাদের দেশ।’