১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সীমান্ত রক্ষায় বীরত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে অবদান রাখায় দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতো তাঁর বক্তব্যেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ অনুপস্থিত। এমনকি যুদ্ধ কার সঙ্গে কোথায় হয়েছে, সে বিষয়েও কোনো উল্লেখ নেই।
আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘বিজয় দিবসে আমি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, যাঁরা ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতের সীমান্ত রক্ষা করার সময় তাঁদের বীরত্ব, নিষ্ঠা ও অটল সংকল্প দিয়ে বিশ্বজুড়ে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন।’
কংগ্রেসের এ নেতা আরও বলেন, ‘তাঁদের অদম্য সাহস, সংগ্রাম ও সর্বোচ্চ ত্যাগ সর্বদা প্রতিটি ভারতীয়ের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।’
এর আগে, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসকে আবারও ভারতের ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ বলে দাবি করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা পোস্টে তিনি এ দাবি করেন। এমনকি টুইটে বাংলাদেশের নামও নেননি মোদি।
নরেন্দ্র মোদির ইংরেজিতে দেওয়া টুইটের বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘বিজয় দিবসে আমরা সেই সাহসী সেনাদের স্মরণ করি, যাঁদের সাহস ও আত্মত্যাগ ১৯৭১ সালে ভারতের এক ঐতিহাসিক বিজয় নিশ্চিত করেছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাঁদের দৃঢ়সংকল্প ও নিঃস্বার্থ সেবা আমাদের জাতিকে রক্ষা করেছিল এবং আমাদের ইতিহাসে গর্বের একটি মুহূর্ত খোদাই করে রেখেছে। এই দিন তাঁদের বীরত্বকে স্যালুট জানায় এবং তাঁদের অতুলনীয় চেতনার কথা মনে করিয়ে দেয়। তাঁদের বীরত্ব ভারতের প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।’
অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও মোদি একই ধরনের কাজ করেছেন। ২০২৪ সালেও বিজয় দিবসে তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের বিজয় বলে দাবি করেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আজ, বিজয় দিবসে আমরা সেই সাহসী সেনাদের সাহস ও আত্মত্যাগকে সম্মান জানাই, যাঁরা ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়ে অবদান রেখেছিলেন। তাঁদের নিঃস্বার্থ নিষ্ঠা ও অটল সংকল্প আমাদের দেশকে সুরক্ষিত করেছে এবং আমাদের গৌরব বৃদ্ধি করেছে। দিনটি তাঁদের অসামান্য বীরত্ব ও অবিচল আত্মার প্রতি একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাঁদের আত্মত্যাগ চিরকাল প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং আমাদের জাতির ইতিহাসে গভীরভাবে অমর হয়ে থাকবে।’
ঐতিহাসিক দলিল বলে, ভারত ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যৌথ বাহিনী হিসেবে যোগ দেয়। ইন্সট্রুমেন্ট অব সারেন্ডার বা আত্মসমর্পণের দলিলেও পাকিস্তানি বাহিনী ‘ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর’ কাছেই আত্মসমর্পণ করেছে। অথচ এর আগের প্রায় ৯ মাস পুরো মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা।
বাংলাদেশের জনগণের ওপর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর অতর্কিত বর্বরোচিত হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধ পরিচালনার জন্য গঠিত ১১টি সেক্টরের কমান্ডারও ছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহ করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস বা ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা, যাঁরা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন। এ ছাড়া পুরো মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে লাখ লাখ বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। যেখানে কয়েক দিনের যুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের প্রাণহানির সংখ্যা খুবই নগণ্য।