আধুনিক জীবনে শারীরিক ভুল ভঙ্গির কারণে দেখা দিচ্ছে মেরুদণ্ডের সমস্যা। এর মধ্যে অঙ্গভঙ্গিজনিত বা পশ্চারাল কোমরব্যথা অন্যতম। কর্মস্থলে সঠিকভাবে বসে কাজ না করার কারণে এটি হয়ে থাকে। তা ছাড়া বসার চেয়ারের কাঠামোগত ত্রুটির জন্যও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রায় সব বয়সে দেহভঙ্গিজনিত কোমরব্যথা হতে পারে। স্কুলগামী শিক্ষার্থী থেকে বয়োবৃদ্ধ, যাঁরা দীর্ঘ সময় চেয়ারে বসেন বা সামনে ঝুঁকে কাজ করেন, তাঁরা সহজেই এ ধরনের কোমরব্যথায় আক্রান্ত হন। মেরুদণ্ড সম্পর্কে সচেতনতা এবং সঠিক দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অভাব এ জন্য দায়ী।
- কোমরব্যথার অন্যতম কারণ দেহভঙ্গি। এ ক্ষেত্রে সাধারণত কোমরের পেছনের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায়। এর কিছু কারণ আছে। যেমন-
- দৈহিক অস্বাভাবিকতার বা বিকৃতির জন্য মেরুদণ্ডের পেশি ও লিগামেন্টে হঠাৎ করে টান অথবা চাপ পড়া।
- সঠিকভাবে না বসার কারণে মেরুদণ্ডের হাড়ে বক্রতার পরিবর্তন।
- কোমরের ভারসাম্যহীনতার জন্য ডিস্কজনিত সমস্যা। অর্থাৎ ডিস্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ, ডিস্কের স্থানচ্যুতি।
উপসর্গ
- কোমর, নিতম্বব্যথা।
- কোমর থেকে পায়ে ঝি ঝি করা। কিছু ক্ষেত্রে অনুভূতি কমে যাওয়া ও দুর্বলতা দেখা দেওয়া।
কারা ঝুঁকিতে
- অফিস কিংবা বাড়িতে যাঁরা সারাক্ষণ বসে কাজ করেন।
- চল্লিশোর্ধ্ব প্রায় সবাই। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের এটি হওয়ার প্রবণতা বেশি।
সমাধানের উপায়
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোমরব্যথার পেছনে কোনো মারাত্মক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এসব ব্যথা সহজে সমাধান করা যায়। তবে কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে সহজে সুস্থ হওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। সারাক্ষণ ব্যথা তাড়া করে। সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। এ জন্য দরকার সঠিক দেহবিন্যাস জেনে সে মোতাবেক কর্মস্থলে কাজ করা এবং প্রয়োজনে দেহভঙ্গি পরিবর্তন করা। ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত শরীরচর্চায় অনেকাংশেই মুক্তি পাওয়া যায়।
- সঠিক দেহভঙ্গি ও সুস্থ জীবনধারা মেনে চলতে হবে।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
- বিকৃত দেহভঙ্গিতে কাজ করা বা বিশ্রাম অবশ্যই বাদ দিতে হবে। সে জন্য—
- শক্ত, সমান বিছানা, পাতলা তোশক, এক বালিশে শোবেন।
- দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বাদ দিন। মাঝে মাঝে উঠে হাঁটাচলা করুন।
- কোমর সোজা রেখে চেয়ারে বসুন। প্রয়োজনে কোমরের পেছনে ভাঁজ করা তোয়ালে, ছোট বালিশ ইত্যাদি সাপোর্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
- দীর্ঘক্ষণ একটানা দাঁড়িয়ে কাজ করবেন না।
- কম হিলের আরামদায়ক জুতা পরুন।
- সাবধানতার সঙ্গে চলাফেরা করুন।
- ভারী কাজে সতর্ক হোন।
- সুস্থ জীবনধারা গড়ে তুলুন
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- নিয়মিত হালকা শারীরিক ব্যায়াম করুন।
- প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আলোতে থাকুন।
- তামাক, অ্যালকোহল পরিহার করুন।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
- নিয়মিতভাবে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও বিভিন্ন খনিজ লবণযুক্ত খাবার খাবেন।
পরামর্শ দিয়েছেন: ডা. এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল ধানমন্ডি, ঢাকা