হোম > ফ্যাক্টচেক > আজকের ফ্যাক্ট

অস্ট্রেলিয়া কি পৃথিবীর একমাত্র চলন্ত মহাদেশ, কোন দিকে ছুটছে

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

পৃথিবীর একমাত্র চলন্ত মহাদেশ অস্ট্রেলিয়া—এমন শিরোনামে একটি ফটোকার্ড সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। ফটোকার্ডটিতে লেখা, ‘প্রতি বছর অস্ট্রেলিয়া তার মূল জায়গা থেকে ৭ সেন্টিমিটার উত্তরে সরে যাচ্ছে।’ 

আসলেই কি অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর একমাত্র মহাদেশ—যেটি চলমান? যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

আগে জেনে নেওয়া যাক, মহাদেশের সঞ্চারণশীলতা বলতে আসলে কী বোঝায়? ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, সময়ে সময়ে মহাদেশগুলোর সঞ্চারণশীলতাকে এক সময় ভূতত্ত্ববিদেরা কন্টিনেন্টাল ড্রিফট বা মহাদেশীয় বিচ্যুতি হিসেবে বর্ণনা করতেন। বর্তমানে মহাদেশীয় বিচ্যুতির এই তত্ত্ব ‘প্লেট টেকটোনিক্স সায়েন্স’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। 

মহাদেশীয় বিচ্যুতির তত্ত্বটির সঙ্গে জার্মান বিজ্ঞানী আলফ্রেড ওয়েজেনারের নাম জড়িয়ে রয়েছে। বিশ শতকের শুরুর দিকে, ওয়েজেনার তাঁর তত্ত্বের ব্যাখ্যা করে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এতে তিনি বলেন, মহাদেশীয় ভূখণ্ডগুলো জিগস’ পাজলের টুকরোর মতো স্থান পরিবর্তন করছে। তিনি এই ধারণাটিকে ‘মহাদেশীয় বিচ্যুতি’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি ধারণা করেন, মহাদেশগুলো এই বিচ্যুতির সময় একে অপরের সঙ্গে কখনো কখনো ধাক্কা খাচ্ছে, আবার কখনো পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

ওয়েজেনার বিশ্বাস করতেন, পৃথিবীর সমস্ত মহাদেশ একসময় একক ভূখণ্ড ছিল, এটিকে বলা হয় প্যানজিয়া। পরবর্তীতে আলাদা হয়ে বর্তমান রূপ নিয়েছে। এই প্রক্রিয়াকেই তিনি বলছেন ‘মহাদেশীয় বিচ্যুতি’।

তবে বিজ্ঞানীরা ওয়েজেনারের কন্টিনেন্টাল ড্রিফট ধারণা গ্রহণ করেননি। কারণ আধুনিক বিজ্ঞান বলে, মহাদেশগুলো টেকটোনিক প্লেট নামক বিশাল শিলাখণ্ডের ওপর অবস্থিত। প্লেটগুলো সর্বদা চলমান এবং প্লেট টেকটোনিক্স প্রক্রিয়ায় মিথস্ক্রিয়া করে। পৃথিবীতে এমন সাতটি প্রধান টেকটোনিক প্লেট রয়েছে। 

প্লেটগুলো হলো— আফ্রিকান, অ্যান্টার্কটিক, ইউরোশিয়ান, ইন্দো–অস্ট্রেলিয়ান, নর্থ আমেরিকান, প্যাসিফিক এবং সাউথ আমেরিকান। এর মধ্যে ইন্দো–অস্ট্রেলিয়ান টেকটোনিক প্লেটের ওপর অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ অবস্থিত। 

টেকটোনিক প্লেটগুলো পৃথিবীর কেন্দ্রকে ঘিরে রাখা তরল ও প্রায় কঠিন শিলাস্তরের ওপর ভাসছে। সাধারণত অতিউত্তপ্ত এই তরল স্তরে চলমান পরিচালন প্রক্রিয়ার প্রভাবে টেকটোনিক প্লেটগুলোর বিচ্যুতি ঘটে।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে ২০১৬ সালে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পৃথিবীর মহাদেশগুলো টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত। এই প্লেটগুলো খুব ধীরে ধীরে স্থান পরিবর্তন করছে। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়া এমন একটি প্লেটে রয়েছে, যা প্রতি বছর প্রায় ২ দশমিক ৭ ইঞ্চি (প্রায় ৭ সেন্টিমিটার) করে সরে যাচ্ছে। বিপরীতে নর্থ আমেরিকান প্লেট প্রতি বছর ১ ইঞ্চি এবং প্যাসিফিক প্লেট বছরে ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি করে সরছে। 

ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশই পৃথিবীর একমাত্র চলন্ত মহাদেশ নয়। বরং পৃথিবীর সবগুলো মহাদেশই গতিশীল। 

আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পোস্টগুলোতে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী জানতে চেয়েছেন, অস্ট্রেলিয়া সরে কোন দিকে যাচ্ছে? মুহাম্মদ সোহরাব আহমেদ নামে একজন লেখেন, ‘এশিয়ার দিকে আসতেছে নাকি, এদিকে আসলে অস্ট্রেলিয়া আমাদের হাতের নাগালে এসে যাবে।’ রেজা চৌধুরী নামে একজন লেখেন, ‘সরে যেতে যেতে বাংলাদেশের সঙ্গে ধাক্কা খেলেই হয়।’ 

চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশটি কোন দিকে সরছে? ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ও অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ইন্দো–অস্ট্রেলিয়ান টেকটোনিক প্লেটের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে অস্ট্রেলিয়া প্রতি বছর উত্তর–পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে। 

নিউ সায়েন্টিস্ট নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়া প্রায় ৫ কোটি বছরের মধ্যে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার মালয় দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্ভুক্ত বোর্নিও এবং দক্ষিণ চীনের সঙ্গে মিলিত হতে পারে। এর ফলে এটি পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বড় ঘটনা হবে; এটি উভয় মহাদেশের ভূগোল এবং জলবায়ু পুনর্নির্মাণ করবে। এ ছাড়া ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১৬ সালের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৯৪ সাল থেকে শুরু করে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে অস্ট্রেলিয়া মাত্র দেড় মিটার সরেছে। 

অর্থাৎ মহাদেশীয় বিচ্যুতির ফলে অস্ট্রেলিয়া কখনো বাংলাদেশের কাছাকাছি আসার সম্ভাবনা নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

ট্রেনের নিচে পড়া ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তিটি বেঁচে আছেন

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখে ড. ইউনূসের প্রশংসা—এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও শেয়ার করলেন আসিফ নজরুল

চট্টগ্রামে হরিজন কলোনিতে অগ্নিকাণ্ডকে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা বলে অপপ্রচার

মুসলিমদের সঙ্গে ইফতার করায় থালাপতি বিজয়ের ছবিযুক্ত ভবন ভাঙার তথ্যটি সঠিক নয়

শাহজালালে স্বর্ণ চুরির ঘটনাটি ২০২৩ সালের

সেলুনে ঘাড় ম্যাসাজের সময় যুবকের মৃত্যুর দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি সাজানো

রাজধানীতে বিপুলসংখ্যক মানুষের বিক্ষোভটি আ.লীগের নয়, ইসকন–বিরোধী মিছিল

ভিজিএফের চাল নিতে গিয়ে নারীদের পদদলিত হওয়ার দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি পাকিস্তানের

যুব মহিলা লীগের নেত্রীকে যুবদলের কর্মী পেটাচ্ছে— এ দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি ভারতের