হোম > ফ্যাক্টচেক > আজকের ফ্যাক্ট

কানাডার গোল্ড ব্রিজের ‘রহস্যময়’ এই ছবি টাইম ট্রাভেলের?

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

সম্প্রতি দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় ১৯৪১ সালে কানাডার গোল্ড ব্রিজ থেকে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা, ‘দেখে মনে হতে পারে সাধারণ একটি ছবি। কিন্তু না, ভালো করে দেখলে চোখে পড়তে পারে অদ্ভুত ও অস্বাভাবিক কিছু বিষয়। কী তা? ১৯৪১ সালে কানাডার গোল্ড ব্রিজ থেকে একটি ছবি তোলা হয়। সেই ছবিতে আরও অনেকের সঙ্গে ছিলেন একজন ব্যক্তি, কিন্তু তিনি সকলের থেকেই আলাদা। বাকিদের পোশাকের সঙ্গে ওই ব্যক্তির পোশাকের কোনও মিলই নেই। মানে ওই ব্যক্তির পোশাক মোটেই ১৯৪১ সালের মতো নয়, বরং তাঁর পোশাক অনেক বেশি এখনকার মতো। ব্যক্তিটির পরনে ছিল একটি চেন লাগানো হুডি, টি-শার্ট। অবাক করার বিষয় এখানেই শেষ নয়, কারণ ১৯৪১ সালের ওই সময়ে মানুষটির হাতে ছিল একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা! কী করে সম্ভব? ওই ছবির পর ব্যক্তিটিকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

ক্যাপশনটির শেষ অংশে বলা হয়েছে, ‘ছবিটি বাস্তব। কোনো এডিট নয়। ছবিটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য এবং এই রহস্য অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে।’ 
 
কেবল সোশ্যাল মিডিয়াতেই নয়, বাংলা ভাষাভাষী দেশীয় ও ভারতীয় একাধিক সংবাদ মাধ্যমেও ছবিটিকে পৃথিবীর অমীমাংসিত পাঁচটি রহস্যময় ঘটনার একটি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

গত ১১ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে ‘বিশ্ব ও মহাকাশ’ নামের ৪০ হাজার সদস্যের একটি গ্রুপে মুনতাহা নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ‘রহস্যময়’ ছবিটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটিতে আজ শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা পর্যন্ত ১৫ হাজারের বেশি রিয়েকশন এবং ১ হাজারের বেশি কমেন্ট হয়েছে। এসব কমেন্টে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ছবিটি নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করতে দেখা গেছে। কেউ বলছেন, ছবিটি এডিটেড। ছবিতে লাল বৃত্তে চিহ্নিত ব্যক্তিকে এডিট করে বসানো হয়েছে। কেউ বলেছেন ছবিটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি। আবার কারও মতে, ছবিতে লাল বৃত্তে চিহ্নিত ‘রহস্যময়’ ওই ব্যক্তি টাইম ট্রাভেল করেছেন। 

ছবিটির প্রকৃত গল্প কে? খুঁজে দেখেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

ছবিটি কে এডিটেড বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি? 

রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ভাইরাল ছবিটি কানাডার ‘কমিউনিটি স্টোরিজ’ নামের একটি ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায়। কমিউনিটি স্টোরিজ হলো নৃবিজ্ঞান, কানাডীয় ইতিহাস, সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন এবং নৃতাত্ত্বিক বিষয়ক কানাডার জাতীয় জাদুঘর কানাডীয় মিউজিয়াম অব হিস্ট্রির তত্ত্বাবধান এবং কানাডা সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত ডিজিটাল মিউজিয়াম কানাডার একটি প্রকল্প। 

কমিউনিটি স্টোরিজের ওয়েবসাইট থেকে ছবিটি সম্পর্কে জানা যায়, এটি ১৯৪১ সালে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার গোল্ড ব্রিজ এলাকা থেকে তোলা হয়েছিল। ছবিটি ১৯৪০ সালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সাউথ ফর্ক ব্রিজের সংস্কার শেষে আবার খুলে দেওয়ার সময় তোলা হয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপসে ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারিতে ছবিটি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৪১ সালে তোলা হলেও ছবিটি প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০০৪ সালে। ওই সময় কানাডার ব্রালোর্ন-পাইওনিয়ার জাদুঘর ‘দেয়ার পাস্ট লিভস হেয়ার’ শিরোনামে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে। ওই প্রদর্শনীতে ছবিটি দেখানো হয়েছিল। পরে ২০১০ সালে এই ছবিসহ আরও একাধিক ছবি জাদুঘরটির অনলাইন সংগ্রহশালায় অন্তর্ভুক্ত করে। অর্থাৎ ছবিটি বাস্তব। এডিটেড বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি নয়। 

ছবিটি কি ‘রহস্যময়’?

স্নোপসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইরাল ছবিটিকে রহস্যময় বা টাইম ট্রাভেলের সঙ্গে মেলানো হয় ছবিতে থাকা লাল বৃত্তে চিহ্নিত ব্যক্তির সঙ্গে থাকা তিনটি উপকরণের কারণে। এগুলো হলো, লোগোযুক্ত টি-শার্ট, ছোট বহনযোগ্য ক্যামেরা এবং তাঁর চোখের চশমা। এসব উপকরণের কারণে ছবিটিকে রহস্যময় বা টাইম ট্রাভেলের সঙ্গে মেলানো হলেও এগুলো ১৯৪০ এর দশকেই পাওয়া যেত। তাই ছবিটিকে রহস্যময় বা টাইম ট্রাভেলের সঙ্গে মেলানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।

লাল বৃত্তে চিহ্নিত ব্যক্তির টি-শার্টটিতে যে লোগোটি দেখা যাচ্ছে, সেটি মন্ট্রিল মেরুনস নামে একটি হকি দলের লোগো। দলটি ১৯২৪ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত উত্তর আমেরিকার পেশাদার হকি লীগ ন্যাশনাল হকি লীগে (এনএইচএল) খেলেছিল। 

এ ছাড়া দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ব্যক্তির পোশাকের বর্ণনায় তাঁর পরনে চেন লাগানো হুডির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ছবিটি বিশ্লেষণে আপাতদৃষ্টিতে টি-শার্টের ওপরে পরিহিত জামাটি হুডি নয় বরং শার্ট হিসেবেই প্রতীয়মান হয়। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় লাল বৃত্তে চিহ্নিত ব্যক্তির সঙ্গে থাকা ক্যামেরাটিকে ডিএসএলআর ক্যামেরা হিসেবে দাবি করা হয়েছে। তবে স্নোপস যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কোডাকের বরাত দিয়ে জানায়, লাল বৃত্তে চিহ্নিত ব্যক্তির সঙ্গে থাকা ছোট বহনযোগ্য ক্যামেরাটি নিয়ে নেটিজেনরা বিস্ময় প্রকাশ করলেও এই ধরনের ক্যামেরা ১৯৪০ এর দশকে নতুন কিছু ছিল না। 

১৯৪১ সালে কোডাকেরই বিভিন্ন মডেলের বহনযোগ্য ক্যামেরা বাজারে পাওয়া যেত। যেমন, এমনই একটি ক্যামেরা কোডাক ৩৫ আর এফ। এটি ১৯৪০ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত বাজারে ছিল।

এ ছাড়া ওই ব্যক্তির চোখে থাকা চশমাটিও ১৯৪০ এর দশকে পাওয়া যেত। যদিও এমন চশমা তখনো মানুষ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে শুরু করেনি। 

সর্বোপরি, ছবিটির মধ্যে কোনো রহস্য নেই এবং টাইম ট্রাভেলেরও কোনো সম্পর্ক নেই। বরং ভাইরাল ছবির লাল বৃত্তে চিহ্নিত ওই ব্যক্তি ছবিতে থাকা তাঁর সমসাময়িক সময়ের অন্যান্যদের চেয়ে বেশি ফ্যাশন সচেতন ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

ট্রেনের নিচে পড়া ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তিটি বেঁচে আছেন

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখে ড. ইউনূসের প্রশংসা—এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও শেয়ার করলেন আসিফ নজরুল

চট্টগ্রামে হরিজন কলোনিতে অগ্নিকাণ্ডকে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা বলে অপপ্রচার

মুসলিমদের সঙ্গে ইফতার করায় থালাপতি বিজয়ের ছবিযুক্ত ভবন ভাঙার তথ্যটি সঠিক নয়

শাহজালালে স্বর্ণ চুরির ঘটনাটি ২০২৩ সালের

সেলুনে ঘাড় ম্যাসাজের সময় যুবকের মৃত্যুর দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি সাজানো

রাজধানীতে বিপুলসংখ্যক মানুষের বিক্ষোভটি আ.লীগের নয়, ইসকন–বিরোধী মিছিল

ভিজিএফের চাল নিতে গিয়ে নারীদের পদদলিত হওয়ার দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি পাকিস্তানের

যুব মহিলা লীগের নেত্রীকে যুবদলের কর্মী পেটাচ্ছে— এ দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি ভারতের