দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন ছিল আজ। সকাল ৮টা থেকে শুরু করে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ। এর মধ্যেই গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু তরুণ সাকিব আল হাসানকে অনুসরণ করছেন। সাকিবের গায়ে সাদা পাঞ্জাবি ও কালো কোট পরা ছিল। একপর্যায়ে সেখানে জটলা তৈরি হয় এবং সাকিব আল হাসান উত্তেজিত হয়ে এক ব্যক্তিকে চড় মারেন।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সাকিব আল হাসান ভোট দেওয়ার পর কেন্দ্র পরিদর্শন করছিলেন সাকিব। সে সময়ই হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে এক সমর্থককে চড় মেরে বসেন তিনি। আসলেই কি সাকিব ভোটের দিন সমর্থককে চড় মেরেছিলেন? দাবিটির সত্যতা অনুসন্ধানে কাজ করেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
দাবির সূত্রপাত যেভাবে
দাবিটির উৎস অনুসন্ধানে দেখা যায়, রোববার (৭ জানুয়ারি) দুপুরের পর বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে সাকিবের চড় মারার ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে উল্লেখ করা হয়, সকালে ভোট দেওয়ার পর কেন্দ্র পরিদর্শন করেন সাকিব। এ সময় ভক্তদের ভিড়ের চাপ সামলাতে না পেরে একজনকে চড় মেরে বসেন তিনি। তবে কোন কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটেছে, তার কোনো উল্লেখ প্রতিবেদনগুলোতে ছিল না। আবার কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম ইতিমধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো সরিয়েও ফেলেছে। কোনো সূত্রের উল্লেখ না থাকা এবং পরে প্রতিবেদন সরিয়ে ফেলার মতো ব্যাপারগুলো সাকিব নির্বাচনের দিনেই ওই তরুণকে চড় মেরেছিলেন—এমন দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
চড় মারার ঘটনার প্রকৃত দিনটির খোঁজে
আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ প্রকৃত দিনটির খোঁজে একাধিক সূত্রের মধ্যে সংযোগের চেষ্টা করে। প্রথমেই মাগুরায় সাকিবের আসনে আজ এমন ঘটনা ঘটেছে কি না, তা জানতে যোগাযোগ করা হয় আজকের পত্রিকার মাগুরা প্রতিনিধি ফয়সাল পারভেজের সঙ্গে। তিনি বলেন, সাকিব আল হাসানকে তাঁর কেন্দ্রে ভোট দিতে দেখেছেন। এরপর সাকিব কেন্দ্র পরিদর্শনে বেরিয়ে পড়েন। স্থানীয়দের দাবি তুলে ধরে তিনি জানান, সাকিবের আসনে আজ এমন কিছু ঘটেছে বলে তারা শুনেনি। ফয়সাল পারভেজ ধারণা করেন, এটি ফরিদপুরের ঘটনা হতে পারে।
পরে যোগাযোগ করা হয় সাকিবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইভানের সঙ্গে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় সাকিবের চড় মারার ঘটনাটি কখনকার? তিনি আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, এটি ফেক, বুদ্ধিমান যে কেউ দেখলেই এটি বুঝতে পারবে।
এর আগে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আজকের পত্রিকা। ওই প্রতিবেদনে সাকিবের নির্বাচনী প্রচারের সঙ্গী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ ইমাম বাকের দাবি করেন, ভিডিওটি তিনি দেখেছেন। এটি এক মাস আগের, আজকের নয়।
আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগের গভীর অনুসন্ধানেও আজ দুপুরের আগে ভিডিওটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পরে অনুসন্ধানে এমন এক ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায়, যিনি ভিডিওটি আগেই দেখেছেন। তিনি ক্রিকেটভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ক্রিকফ্রেঞ্জির ক্রীড়া সাংবাদিক পারভেজ আল হাসান। ভিডিওটি সম্পর্কে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগকে তিনি জানান, ঘটনাটি ফরিদপুরের। ৩ জানুয়ারিতেই (বুধবার) তিনি ভিডিওটি দেখেছেন। তাঁকে ভিডিওটি ইনবক্সে শেয়ার করা হয়েছিল। আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগের সঙ্গে সে চ্যাটের একটি স্ক্রিনশটও শেয়ার করেন তিনি।