হোম > ফ্যাক্টচেক > আজকের ফ্যাক্ট

টিকটক কি বেকার লোকদের জন্য তৈরি, প্রতিষ্ঠাতার বক্তব্য ভাইরাল 

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

চীনা ইন্টারনেট উদ্যোক্তা এবং শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটক প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইমিংকে উদ্ধৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর একটি বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। ওই বক্তব্য অনুযায়ী, ঝাং ইমিং বলেছেন, টিকটক অ্যাপ্লিকেশনটি কেবল মানসিকভাবে অস্থির ও বেকার লোকদের জন্য তৈরি করেছেন তিনি এবং এই ধরনের মানুষের সংখ্যা ভারতে সব থেকে বেশি।

প্রায় এক সপ্তাহ আগে টিকটকেই ঝাং ইমিংয়ের এমন একটি মন্তব্য ভাইরাল হয়েছে। শান্ত ইসলাম নামের একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা ভাইরাল মন্তব্যটি নিয়ে তৈরি ১১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আজ রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ২টা পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার বার দেখা হয়েছে। 

ঝাং ইমিং কি টিকটক অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরির উদ্যোগ নিয়ে এমন কিছু বলেছেন? 

গুগল অ্যাডভান্স সার্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখা যায়, টিকটক অ্যাপলিকেশনটি নির্মাণ নিয়ে ঝাং ইমিংয়ের নামে প্রচারিত মন্তব্যটির প্রথম সম্ভাব্য সূত্রপাত ২০২০ সালের ১৯ মে। ওই দিন মিস পিটিট (Miss Petite) নামের নাইজেরিয়া ভিত্তিক একটি ব্লগসাইটে ঝাং ইমিংয়ের নামে প্রচারিত মন্তব্যটি খুঁজে পাওয়া যায়। ব্লগসাইটটিতে ঝাং ইমিংয়ের নামে প্রচারিত মন্তব্যটি ফটোকার্ড আকারে প্রকাশ করা হয়েছিল। 

ব্লগসাইটটিতে প্রচারিত মন্তব্যটি সম্পর্কে দাবি করা হয় ঝাং ইমিং বলেছেন, তিনি টিকটক তৈরি করেছেন বেকার ও মানসিকভাবে অস্থির লোকদের জন্য। ঝাং ইমিং চিন্তাও করেননি এই ধরনের লোকের সংখ্যা ভারতে সবচেয়ে বেশি। ব্লগসাইটটিতে আরও দাবি করা হয়, ঝাং ইমিংয়ের এই মন্তব্য অনেক টিকটক ব্যবহারকারীর মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এবং তাঁরা টিকটক ব্যবহার বন্ধ করতে #TikTokExposed নামে প্রচারণা শুরু করে। 

একইদিনে নাইজেরিয়াভিত্তিক ইন্টারনেট ফোরাম নাইরাল্যান্ডে একই ফটোকার্ড শেয়ার করা হয়। সেখানে ফোরামটির ব্যবহারকারীরা ঝাং ইমিংয়ের নামে প্রচারিত মন্তব্যটির পক্ষে-বিপক্ষে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। এরপরের দিনেই অর্থাৎ ২০ মে জিস্ট ম্যানিয়া নামের আরেকটি নাইজেরিয়াভিত্তিক সাইটেও একই ফটোকার্ড প্রচার করতে দেখা যায়।  

তবে এসব ওয়েবসাইটে মন্তব্যটি ঝাং ইমিং কোথায়, কখন বলেছে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। এসব ওয়েবসাইটের বাইরে নির্ভরযোগ্য কোনো সংবাদমাধ্যমে টিকটক তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে ঝাং ইমিংয়ের নামে প্রচারিত মন্তব্যটির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

স্বভাবতই, ঝাং ইমিং টিকটক ব্যবহারকারীদের নিয়ে এমন কোনো মন্তব্য করে থাকলে সেটি সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হতো। বরং টিকটকের ওয়েবসাইটে অ্যাপ্লিকেশনটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, টিকটকের উদ্দেশ্য সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা এবং মানুষের মধ্যে আনন্দ বিলিয়ে দেওয়া।
 
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড ২০২০ সালের ২০ মে টিকটক প্রতিষ্ঠাতার বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে জানায়, ঝাং ইমিংয়ের ভাইরাল মন্তব্যটির কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া যায়নি এবং টিকটকের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে এমন কোনো বক্তব্যের অস্তিত্বের হদিস মেলেনি।

অর্থাৎ ঝাং ইমিংয়ের নামে টিকটক তৈরির কারণ হিসেবে ভাইরাল মন্তব্যটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।

প্রসঙ্গত,  ভারতের লাদাখে বিরোধপূর্ণ চীন-ভারত সীমান্তে  ২০২০ সালের ১৫ জুনে দুই দেশের সৈন্যদের মধ্যে হাতাহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভারতের অন্তত বিশজন সৈন্য নিহত হয়। এ ঘটনার দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং ভারত টিকটকসহ ৫৯ টি চীনা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।  

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে ২০২০ সালের ৪ জুন প্রকাশিত এক সংবাদ সূত্রে জানা যায়, ওই বছরের  মার্চ এবং এপ্রিলে ভারতে টিকটক গ্রাহকের সংখ্যা অনেক কমে যায়। সেন্সর টাওয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদ মাধ্যম লেটেস্টলি জানায়, ওই সময় দেশটিতে টিকটক ডাউনলোডের চাহিদা ৫০ শতাংশ কমে যায়। এ জন্য দায়ী করা হয়, ২০১৯ সাল থেকে শুরু হওয়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণকে। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, করোনা সংক্রমণের জন্য চীনকে দায়ী করে ভারতে চীনা অ্যাপ বয়কটের দাবি ওঠে। সেই কারণেই বেইজিংকে কোণঠাসা করতে এক ধাক্কায় ভারতে জনপ্রিয় অ্যাপের চাহিদা একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। 

ধারণা করা যায়, টিকটক নিয়ে ভারত ও চীনের ২০২০ সালে এসব দ্বন্দ্বের ফলাফল হিসেবে ভারতীয়দের ইঙ্গিত করে অ্যাপ্লিকেশনটির প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইমিংয়ের নামে ভাইরাল মন্তব্যটি ছড়িয়ে থাকতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

ট্রেনের নিচে পড়া ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তিটি বেঁচে আছেন

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখে ড. ইউনূসের প্রশংসা—এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও শেয়ার করলেন আসিফ নজরুল

চট্টগ্রামে হরিজন কলোনিতে অগ্নিকাণ্ডকে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা বলে অপপ্রচার

মুসলিমদের সঙ্গে ইফতার করায় থালাপতি বিজয়ের ছবিযুক্ত ভবন ভাঙার তথ্যটি সঠিক নয়

শাহজালালে স্বর্ণ চুরির ঘটনাটি ২০২৩ সালের

সেলুনে ঘাড় ম্যাসাজের সময় যুবকের মৃত্যুর দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি সাজানো

রাজধানীতে বিপুলসংখ্যক মানুষের বিক্ষোভটি আ.লীগের নয়, ইসকন–বিরোধী মিছিল

ভিজিএফের চাল নিতে গিয়ে নারীদের পদদলিত হওয়ার দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি পাকিস্তানের

যুব মহিলা লীগের নেত্রীকে যুবদলের কর্মী পেটাচ্ছে— এ দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি ভারতের