হোম > ফ্যাক্টচেক

‘হাইকমিশনারের চিকিৎসা বিলাস’ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে আজকের পত্রিকার নামে অপপ্রচার

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডার ১৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম। দায়িত্ব পালনকালেই কমপক্ষে ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা চিকিৎসা বাবদ খরচ দেখানোর তথ্য বেরিয়ে এসেছে সরকারি একটি সংস্থার প্রতিবেদনে। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ‘সিঙ্গাপুরে হাইকমিশনার তৌহিদুলের বিলাসী চিকিৎসা, ব্যয় ৫ কোটি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আজকের পত্রিকা। প্রতিবেদনটি আজকের পত্রিকার ছাপা ও অনলাইন উভয় সংস্করণে একই দিনে প্রকাশিত হয়। ফেসবুকে দুটি জাতীয় দৈনিকের প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশিত কথিত প্রতিবেদনের দুটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, হাইকমিশনারকে নিয়ে আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

কথিত প্রতিবেদনটির শিরোনাম, ‘টাকার বিনিময়ে মনগড়া ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার “আজকের পত্রিকা”র সাংবাদিকের।’ কথিত প্রতিবেদন দুটির একটির ছবিতে দৈনিক প্রথম আলোর নাম ও জলছাপ রয়েছে। প্রতিবেদনটি গত ৩ অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছে—এমন উল্লেখ রয়েছে। আরেকটিতে দৈনিক নয়া দিগন্তের নাম ও জলছাপ রয়েছে। এ প্রতিবেদন প্রকাশের তারিখ গত ৪ অক্টোবর। 

প্রতিবেদন দুটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘টাকার বিনিময়ে মনগড়া ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার “আজকের পত্রিকা”র সাংবাদিকের। ছাত্র জনতার বিপ্লবের মুখে ফ্যাসিবাদ সরকারের পতনের পরও ফ্যাসিবাদের দোসর হলুদ সাংবাদিকরা এখনো সোচ্চার রয়েছে নিজ মহিমায়। আজকের পত্রিকা নামের এক পত্রিকার এক সাংবাদিক টাকার বিনিময়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করছে নিয়মিত। আজ পত্রিকার প্রথম পেজে সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনের মিশন প্রধানসহ চার জন অফিসারের নামে টাকার বিনিময়ে সংবাদ প্রচার করেন এই হলুদ সাংবাদিক। সংবাদ প্রচারের পর সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগ করলে উনি উক্ত টাকা বন্যার্তদের জন্য নিয়েছেন বলে স্বীকার করেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ও মিশনের কয়েকজন ফ্যাসিবাদের দোসরের অনুরোধে, তাদের দেওয়া তথ্যের আলোকে সংবাদটি রচনা করেন। উনি এটাও বলেন ব্যক্তিগতভাবে সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার বা অন্য অফিসারদের সাথে তার কোন যোগাযোগ বা পরিচয় নেই। অডিট প্রশ্নগুলো যে আগেই নিস্পত্তি হয়েছে সেটা তিনি খবর প্রকাশের পরে জানতে পারেন বলে দুঃখ প্রকাশ করেন।’ 

আজকের পত্রিকার প্রতিবেদকের মন্তব্য দাবিতে প্রতিবেদনগুলোতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এই তথ্যগুলি এবং তিনি যে পতিত সরকারের হাতে বারবার অপমানিত হয়েছেন তা আগে জানা থাকলে এই খবর বের করতেন না। উল্লেখ্য, হাই কমিশনার বিসিএস পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম হওয়া সত্ত্বেও হাসিনা সরকারের রোষানলে পরে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বৈষম্যের স্বীকার হয়েছেন ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই। ফ্যাসিবাদ হাসিনা পরপর তিনবার তাঁর বদলির ফাইল ছুড়ে ফেলেছেন এবং তা কখনো তার সিভি তে প্রফেসর ইউনুস এর রেফারেন্স থাকায় (দুই জনের বাড়িই হাটহাজারী উপজেলার একই এলাকায়) আবার কখনও হাটহাজারী কেন্দ্রিক হেফাজতের সাথে সংশ্লিষ্টতা অপ্রমানিত অভিযোগ দিয়ে। সরকার এখন কি করেন সেটাই দেখার বিষয়।’ 

আপনার মতামত’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) কথিত প্রতিবেদনের ছবি দুটি পোস্ট করা হয়। পেজটির লোকেশন দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর। পেজটির ফলোয়ার সংখ্যা মাত্র ১১৮। 

প্রতিবেদন দুটির সত্যতা যাচাইয়ে দৈনিক প্রথম আলোর গত বৃহস্পতিবারের (৩ অক্টোবর) ছাপা সংস্করণ খুঁজে এমন কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণেও এমন কোনো সংবাদ নেই। দৈনিক নয়া দিগন্তের গত শুক্রবারের (৪ অক্টোবর) ছাপা ও অনলাইন সংস্করণ খুঁজেও এমন কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। 

আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দৈনিক নয়া দিগন্তে আজকের পত্রিকা সম্পর্কে প্রকাশিত কথিত প্রতিবেদনের পোস্টটি ‘স্পনসরড’ অর্থাৎ পোস্টটি ফেসবুকে বিজ্ঞাপন আকারে প্রচার করা হচ্ছে। ফেসবুকের মালিক প্রতিষ্ঠান মেটার অ্যাড লাইব্রেরি খুঁজে দেখা যায়, গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রচারের জন্য পোস্টটি স্পনসরড করা হয়েছে। 

প্রথম আলো ও নয়া দিগন্তে আজকের পত্রিকা সম্পর্কে প্রকাশিত কথিত প্রতিবেদনগুলোতেও বেশ কিছু অসংগতি রয়েছে। যেমন, কথিত দুটি প্রতিবেদনের শিরোনামেই দাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে কখনো দাড়ি ব্যবহার করা হয় না। প্রথম আলোর কথিত প্রতিবেদনটিতে ক্রেডিট লাইনে বিশেষ প্রতিবেদক লেখা রয়েছে। আবার নয়া দিগন্তের ক্ষেত্রে ‘এম মাইনুদ্দিন’ লেখা রয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি ভাষা ও বানানগত ত্রুটি রয়েছে। গণমাধ্যমের ছাপা সংস্করণে সাধারণত এ ধরনের ত্রুটি দেখা যায় না।

নয়া দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিল আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে জানান, এই নামে নয়া দিগন্তে কেউ নেই এবং নয়া দিগন্তে এমন কোনো সংবাদও কখনো প্রকাশিত হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

গোপালগঞ্জ সহিংসতা নিয়ে অসম্পর্কিত ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে আ. লীগ: প্রেস উইং

নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

নাটকের দৃশ্যকে ধর্ষণের পর হত্যা দাবিতে প্রচার

পটুয়াখালীতে তরুণীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার ভাইরাল ভিডিও সম্পর্কে যা জানা গেল

ইন্দুরকানীতে দেবর-ভাবিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটি কি রাজনৈতিক

ইটভাটায় যুবক ও চিতাবাঘের লড়াইয়ের ভিডিও বাংলাদেশের নয়, ভারতের