হোম > ফ্যাক্টচেক

অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস: সর্বাধিক গুজব ছড়িয়েছে প্রধান উপদেষ্টার নামে

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। তিন দিন সরকারবিহীন থাকার পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়। গতকাল রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) এই সরকার এক মাস পূর্ণ হলো। এই এক মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক উপদেষ্টার নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে বিভিন্ন গুজব। সবচেয়ে বেশি গুজব ছড়িয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে নিয়ে। গুজবের অধিকাংশই ছড়িয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ফটোকার্ড আকারে। এই ফটোকার্ডগুলোতে উপদেষ্টাদের নামে ধর্মীয়, খেলাধুলা ও রাজনীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে বানোয়াট মন্তব্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গুজব ছড়িয়ে কারও চরিত্র হননও করা হয়েছে।

আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগসহ দেশের একাধিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত প্রতিবেদন যাচাই করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নামে যত গুজব
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গতকাল রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নামে ফেসবুকে অন্তত ১১টি গুজব প্রচারিত হয়েছে। এসব গুজব ধর্মীয়, শিক্ষা, খেলাধুলা, প্রবাসী ও জাতীয় সংগীত–সংক্রান্ত। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ফেসবুকে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ে। দাবি করা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে বলেছেন, ‘ক্রিকেট বাংলাদেশের তরুণদের মূল্যবান সময় নষ্ট ও মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় বাধা, এই জন্য আমি খুব দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও ক্রিকেটকে এ দেশ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করব।’ তবে তাঁর এ বক্তব্যের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিয়ে তাঁর নামে বেসরকারি টিভি চ্যানেল যমুনা টিভির ফটোকার্ড শেয়ার করে দাবি করা হয়, ‘ক্রিকেট বোর্ড বিলুপ্ত করে এর সঙ্গে জড়িতদের ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজ করতে বললেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস’।

শুধু এটিই নয়, একই টিভির একাধিক ফটোকার্ড ব্যবহার করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে আছে দেশের প্রতিটি পরিবারে একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়ার ঘোষণা, ১ সেপ্টেম্বর থেকে সব মসজিদ ও মাদ্রাসার বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করে দেওয়ার ঘোষণা, প্রবাসে কোনো বাংলাদেশি মারা গেলে তাঁর লাশ বিনা খরচে দেশে আনার ঘোষণা, জাতীয় সংগীতের পরিবর্তে সুরা ফাতেহা পড়তে ড. ইউনূসের অনুরোধ। যমুনা টিভি প্রতিটি ফটোকার্ড ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, তাঁদের নামে প্রচারিত এসব ফটোকার্ড ভুয়া।

শুধু যমুনা টিভিই নয়, বেসরকারি টিভি চ্যানেল ডিবিসি, এনটিভির ফটোকার্ড ব্যবহার করেও ড. ইউনূসের নামে একাধিক গুজব ছড়িয়েছে। এর মধ্যে আছে এনটিভির ফটোকার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের সব দরিদ্র ছাত্র–ছাত্রীর পড়াশোনা ফ্রি করে দেওয়ার ঘোষণা। ডিবিসির ফটোকার্ড ব্যবহার করে আলেমদের সঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গে ড. ইউনূসের মন্তব্য, ‘আমি আলেমদের ভালোবাসি। তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে চাই।’ ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুসন্ধানে এসব ফটোকার্ডের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এর বাইরে সংবাদমাধ্যমের নাম ব্যবহার করে ড. ইউনূসের নামে ইউপি চেয়ারম্যানের যোগ্যতা হওয়া উচিত মাস্টার্স পাস—এমন ভিত্তিহীন মন্তব্য ভাইরাল হয়েছে।

অন্য উপদেষ্টাদের নামে গুজব
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নামে চলতি মাসের শুরুতে একটি মন্তব্য ভাইরাল হয়। ভাইরাল মন্তব্যটিতে আসিফ নজরুলের নামে দাবি করা হয়, কর্মবিরতিতে যারাই যাবে তাদের আর ফেরানো হবে না। সঙ্গে সঙ্গে তিন দিনেই নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে।

তবে একাধিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এমন কোনো মন্তব্য সংবলিত প্রতিবেদন বাংলাদেশের কোনো গণমাধ্যমে নেই। শুধু ফেসবুকেই এই মন্তব্যের অস্তিত্ব মেলে। ড. আসিফ নজরুলও নিশ্চিত করেছেন, এমন কোনো কথা তিনি বলেননি। তাঁকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।


ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইনের বরাতে আগস্টের শেষদিকে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে যে, চলতি সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে বাংলাদেশে সব পর্নোগ্রাফিক সাইট বন্ধ থাকবে। ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানের যাচাইয়ে ধর্ম উপদেষ্টার এমন কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বরং ধর্ম উপদেষ্টার একান্ত সহকারী ইকরামুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, বিষয়টি ভুয়া। একটি শ্রেণি ধর্ম উপদেষ্টার সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। উপদেষ্টার বক্তব্যের জন্য তাঁর ব্যক্তিগত আইডি ও ফেসবুক পেজ ফলো করা উচিত।

গুজবের শিকার হয়েছেন উপদেষ্টা পরিষদে দায়িত্ব পাওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও নাহিদ ইসলামও। অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া নাহিদ ইসলামের নামে আগস্টের শুরুতে ছড়িয়ে পড়ে যে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে সন্ধ্যার পর ইন্টারনেট বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। 

আবার ক্যাম্পাসভিত্তিক নিউজ পোর্টাল ডেইলি ক্যাম্পাসের ফটোকার্ড ব্যবহার করে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ‘সব গাঁজা ব্যবসায়ীকে আটক করা হবে ইনশা আল্লাহ’—এমন একটি মন্তব্য ছড়িয়ে পড়ে। এই দুই উপদেষ্টার নামে প্রচারিত দুটি বক্তব্যই ফ্যাক্টচেকে অসত্য প্রমাণিত হয়েছে। 

এডিটেড ছবি ও বানোয়াট মেসেঞ্জার চ্যাটের স্ক্রিনশট দিয়ে গুজব ছড়িয়ে আসিফ মাহমুদের চরিত্রহননের চেষ্টাও দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

 

এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্তির দিনে এই সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও বর্তমান বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। 

আজকের আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি গত ২৫ আগস্ট রাতের। সচিবালয় এলাকায় বাংলাদেশ আনসারের অঙ্গীভূত সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। ওই সময় বাহিনীটির একটি গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা চালায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও অন্য শিক্ষার্থীদের সহায়তায় রক্ষা পান গাড়ির ভেতরে থাকা আনসার কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন:

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

গোপালগঞ্জ সহিংসতা নিয়ে অসম্পর্কিত ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে আ. লীগ: প্রেস উইং

নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

নাটকের দৃশ্যকে ধর্ষণের পর হত্যা দাবিতে প্রচার

পটুয়াখালীতে তরুণীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার ভাইরাল ভিডিও সম্পর্কে যা জানা গেল

ইন্দুরকানীতে দেবর-ভাবিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটি কি রাজনৈতিক

ইটভাটায় যুবক ও চিতাবাঘের লড়াইয়ের ভিডিও বাংলাদেশের নয়, ভারতের