হোম > ফ্যাক্টচেক > আজকের ফ্যাক্ট

পদ্মা সেতু ও ড. ইউনূসকে নিয়ে ভারত থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ! ভাইরাল ভিডিওর পেছনের ঘটনা জানুন

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক

ভারত থেকে শেখ হাসিনা ভাষণ দেওয়ার দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ভারতে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত তিনি প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখেননি। ভারতে প্রথমবার তাঁর প্রকাশ্যে আসার দাবিতে একাধিক ভিডিও ছড়িয়েছে। সেগুলো শনাক্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। শেখ হাসিনার নামে আরেকটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। পদ্মা সেতু ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গে কথা বলা সেই ভাষণ ভারত থেকে দেওয়া বলে দাবি করা হয়েছে।

ভিডিওতে শেখ হাসিনাকে কথা বলতে দেখা যায়। এ ছাড়া পেছনে ভারতের পতাকা ও ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার’ লিখিত একটি মনোগ্রাম দেখা যায়। শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে একটি মিথ্যা অপবাদ আমাদের ওপর দেওয়া হয়েছিল। স্বনামধন্য মানুষ, যাকে আমি নিজেই সব থেকে বেশি সুযোগ দিয়েছি। ব্যবসা-বাণিজ্য তাঁর ব্যাংকে টাকা দেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতে সব থেকে বেশি সুযোগ যাকে দিয়েছিলাম... গ্রামীণ ব্যাংক, ব্যাংকের এমডি, আইন অনুযায়ী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এমডি থাকতে পারে। তখন ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত এমডির পদে সে ছিল। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক একটা উদ্যোগ নিয়েছিল যে আসলে আইনগতভাবে সে থাকতে পারে না। তখন তাকে বলা হয়েছিল, আমাদের তথ্যে আমরা বলেছিলাম, আপনি গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হোন। অ্যাডভাইজার ইমেরিটাস হিসেবে একটা মর্যাদা দিয়ে তাকে দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি সেই এমডি পদটা ছাড়বেন না...

মো. জাহিদ হোসেন (Md Jahid Hosen) নামে একটি অ্যাকাউন্ট আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে করা পোস্টটি বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা আছে, ‘ইন্ডিয়া থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ।’

ভিডিওটি আজ বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৬ হাজারের বেশি দেখা হয়েছে এবং এতে ১ হাজার ৬৬০টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। ভিডিওটিতে ১৪৭টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ৫২। এসব কমেন্টে সবাই সত্য ভেবে মন্তব্য করেছেন। মো. হানিফ (MD Hanif) নামে অ্যাকাউন্ট লিখেছেন, ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু জয়তু শেখ হাসিনা জাগো বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরা জাগো জয় বাংলা।’ ফকির মোহাম্মদ লুৎফর রহমান লিখেছেন, ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।’

হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ নামের একটি পেজ থেকে এবং মুন্না হাওলাদারমো. ইব্রাহিম (Md Ibrahim) নামে অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার বলা, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে একটি মিথ্যা অপবাদ আমাদের ওপর দেওয়া হয়েছিল। স্বনামধন্য মানুষ, যাকে আমি নিজেই সব থেকে বেশি সুযোগ দিয়েছি...’ এই বক্তব্য গুগলে সার্চ করা হলে আরটিভির ইউটিউব চ্যানেলে একই ভিডিও পাওয়া যায়। এই ভিডিওটি ২০২২ সালের ১৫ জুনে প্রকাশিত হয়। এর সঙ্গে, শেখ হাসিনার পরনে থাকা শাড়ি, ডান দিকে বুকের ওপর থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাচ, চশমা, সামনে থাকা তিনটি মাইক্রোফোনের মিল পাওয়া যায়। তবে পেছনে ভারতের পতাকা ও ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার’ লিখিত মনোগ্রাম দেখা যায়নি।

ভারত থেকে শেখ হাসিনা ভাষণ দেওয়ার দাবিতে ছিড়িয়ে পড়া ভিডিওর সাথে ২০২২ সালে স্পেশাল সিউকিরিটি ফোর্সের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দৃশ্যের সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

ভিডিওর শিরোনাম থেকে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

ভিডিওটির ৩৭ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে একটি মিথ্যা অপবাদ আমাদের ওপর দেওয়া হয়েছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো সেটা আমাদেরই একজন স্বনামধন্য মানুষ, যাকে আমি নিজেই সব থেকে বেশি সুযোগ দিয়েছি। ব্যবসা-বাণিজ্য তার ব্যাংকে টাকা দেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতে সব থেকে বেশি সুযোগ যাকে দিয়েছিলাম, সেই বেইমানিটা করল, সামান্য ব্যাংকের একটা এমডি পদের জন্য। সেটা হলো ড. ইউনূস। আমি নাম বলব। কারণ, এখন আমি পদ্মা সেতু করে ফেলেছি।’

এই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার বলা এসব কথার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর বক্তব্যেরও মিল পাওয়া যায়।

যুগান্তরে ২০২২ সালের ১৫ জুনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার দেওয়া একই বক্তব্য পাওয়া যায়।

সুতরাং, ভারত থেকে শেখ হাসিনা ভাষণ দিয়েছেন—এমন দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি বাংলাদেশ থেকেই ধারণ করা। প্রকৃতপক্ষে, ২০২২ সালের ১৫ জুনে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার বক্তব্যের ভিডিও সম্পাদনা করে ভারতীয় পতাকা যুক্ত করে এই দাবিতে ছড়ানো হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

গোপালগঞ্জ সহিংসতা নিয়ে অসম্পর্কিত ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে আ. লীগ: প্রেস উইং

নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

নাটকের দৃশ্যকে ধর্ষণের পর হত্যা দাবিতে প্রচার

পটুয়াখালীতে তরুণীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার ভাইরাল ভিডিও সম্পর্কে যা জানা গেল

ইন্দুরকানীতে দেবর-ভাবিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটি কি রাজনৈতিক

ইটভাটায় যুবক ও চিতাবাঘের লড়াইয়ের ভিডিও বাংলাদেশের নয়, ভারতের