ও পলাশ...ও শিমুল কেন এ মন মোর রাঙালে/ জানি না জানি না আমার এ ঘুম কেন ভাঙালে...লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া কালজয়ী এ গান শিমুল-পলাশকে ভীষণভাবে মনে করিয়ে দেয়। এমন অজস্র গানে, কবিতার ছন্দে উঠে এসেছে বসন্তের এই প্রতীক। বাঙালির সংস্কৃতির আবাহনে হৃদয়কে সাজানো বসন্তের স্মারক শিমুল-পলাশ দিন দিন কমে যাচ্ছে।
ঘিওর উপজেলাসহ মানিকগঞ্জে শিমুল, পলাশগাছ ও ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য, সৌরভ ও শোভা এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে সেই চিরচেনা শিমুল ও পলাশগাছ এখন বিলুপ্তির পথে।
জানা যায়, বসন্তকালে শিমুল ও পলাশগাছ শুধু অপরূপ শোভা বৃদ্ধি করত না। সৌন্দর্যের পাশাপাশি গাছের মালিকও আর্থিকভাবে লাভবান হতেন। শিমুলগাছের তুলা আর সেই তুলা দিয়ে লেপ-তোশকসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হতো।
উপজেলার সিংজুরী গ্রামের কৃষক মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাড়িতে তিনটি শিমুলগাছ থেকে যে পরিমাণ তুলা পাই, তা বাজারে বিক্রি করে প্রতিবছর বেশ লাভবান হতে পেরেছি। প্রতিদিন গাছের লাল শিমুল ফুল ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতে গাছতলায় মানুষ ভিড় করে।’
মানিকগঞ্জের ঘিওর, সাটুরিয়া, সিঙ্গাইর, হরিরামপুর, শিবালয়, দৌলতপুর উপজেলার গাঁয়ের মেঠো পথের ধারে অযত্ন-অবহেলায় এখনো কিছু শিমুল ও পলাশগাছের দেখা মেলে। এসব গাছের কোলজুড়ে হেসে উঠেছে রক্তিম ফুল। তবে পরিমাণে খুবই কম।
কারণ হিসেবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘বারসিক’-এর মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় জানান, এটি ফলদ বৃক্ষ নয়, শুধু ফুলের সৌন্দর্য। এ ছাড়া এই গাছের কাঠ জ্বালানি ছাড়া কোনো কাজে আসে না বলে এই গাছ লাগাতে মানুষের এত অনীহা।
জানা গেছে, পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ইন্দোনেশিয়া হয়ে শিমুল এসেছে এই বাংলায়। এর ইংরেজি নাম সিল্ক কটন। ১৮ রকম ভেষজ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এই শিমুল।
মানিকগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব লক্ষ্মী চ্যাটার্জি বলেন, ‘মূলত প্রকৃতির মিলন হয় বসন্ত ঋতুতেই। আর পলাশ, শিমুলগাছে লাগে আগুন রঙের খেলা।’ তিনি আক্ষেপের সুরে জানালেন, দিন দিন শিমুল-পলাশগাছ উজাড় হওয়ায় প্রকৃতির রূপ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এই গাছ লাগানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, ‘পলাশ-শিমুলগাছ টিকে থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।’