ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির কারণে উদ্বেগ বেড়েছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কৃষকদের মধ্যে। রবি মৌসুমের শুরুতেই হঠাৎ করেই চাষাবাদের খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এ এলাকার চাষিরা। জ্বালানি তেলের আকস্মিক দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা। তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়লে ফসল উৎপাদন ব্যয় বাড়বে ত্রিশ শতাংশ। এর ফলে কৃষি অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন কৃষক ও খেতমজুরেরা।
শীতের আগমনেই দৌলতপুর উপজেলার মাঠজুড়ে ব্যস্ত কৃষক ও খেতমজুরেরা। এই মৌসুমে একদিকে মাঠ থেকে ফসল ঘরে তোলেন আরেকদিকে নতুন আবাদের জন্য খেত প্রস্তুত করেন কৃষকেরা। উপজেলার চাষিরা এখন পেঁয়াজ, আলু, ভুট্টা, চীনা বাদাম, রসুন, গম, ছোলা, মসুরিসহ শীতকালীন সবজির পাশাপাশি অন্যান্য শস্য আবাদ করছেন।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত এক বিঘা জমিতে আলু চাষে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। কিন্তু তেলের দাম বৃদ্ধিতে সেই খরচে যোগ হলো বিঘাপ্রতি আরও ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। আর বাড়তি এই খরচ নতুন দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছে খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদকদের মনে। তারা জানান, যান্ত্রিক কৃষি ব্যবস্থায় উৎপাদন খরচ অনেকটাই নির্ভর করে ডিজেলের ওপর। মৌসুমের আগেই ফসল উৎপাদনের জন্য আলাদা করে খরচ রেখে দেন অনেক কৃষক। তবে চলতি মৌসুমে হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং এর ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় শুরুতেই দেখা দিয়েছে মূলধনের অভাব। এতে অসহায় হয়ে পড়েছেন অনেক চাষি।
উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের পেঁয়াজচাষি আব্দুল লতিফ জানান, তেলের দাম বাড়ায় এরই মধ্যে বেড়েছে হাল, সেচ ও পরিবহন খরচ। এতে উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে। ফসলে ভালো দাম না পেলে কৃষি কাজ থেকে সরে আসতে হতে পারে।
শনিবার দুপুরে উপজেলার হোসেনাবাদের একটি মাঠে কলের লাঙল দিয়ে জমি চাষ করছিলেন কামরুল। তিনি বলেন, শনিবারে ১৫ টাকা বেশি দরে বাজার থেকে ডিজেল কিনেছি। আগে এক বিঘা জমি চাষ করতে নিতাম ৩০০ টাকা। তেলের দাম বাড়ায় এখন আমাদের আগের তুলনায় কিছুটা বেশি টাকা নিতে হবে।
আকরাম হোসেন নামের এক সেচ শ্রমিক বলেন, তেলের দাম বাড়ায় আমাদেরও বেশি টাকা নিতে হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে দুই থেকে আড়াই লিটার তেল লাগে।
দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ ডিজেল ব্যবহার হয় পরিবহন ও কৃষিতে। তাই নিরবচ্ছিন্ন ফসল উৎপাদন ও কৃষকের স্বার্থে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি সংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা কৃষি অফিসার নুরুল ইসলাম বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় সব থেকে বেশি প্রভাব পড়বে কৃষিতে। আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।