হোম > পরিবেশ

১৩ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে ট্রাম্পের জলবায়ুবিরোধী নীতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

ট্রাম্পের জলবায়ু নীতিতে সম্ভাব্য ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বেশি ঘটবে ভারতে। ছবি: এএফপি

বিশ্ব যখন জলবায়ুসংকট মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা জোরদার করছে, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ুবিরোধী নীতি গ্রহণ করেছেন। আতঙ্কের বিষয় হলো, ট্রাম্পের এই নীতি আগামী কয়েক দশকে বৈশ্বিক উষ্ণতা-সম্পর্কিত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

প্রোপাবলিকা ও ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের যৌথ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে জীবাশ্ম জ্বালানি সম্প্রসারণ ও নির্গমন হ্রাস উদ্যোগ বাতিলের ফলে অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হবে। এতে ভবিষ্যতে শুধু তাপমাত্রাজনিত কারণেই ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

গত ৮ এপ্রিল একটি নির্বাহী আদেশে পুনরায় কয়লা উৎপাদন বহাল করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

গবেষণা বলছে, আগামী দশকগুলোতে তীব্র গরমে প্রাণহানি সবচেয়ে বেশি হবে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার দরিদ্র ও উষ্ণ দেশগুলোতে। এই দেশগুলো বৈশ্বিক দূষণের তুলনামূলক কম অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও তাপমাত্রা বৃদ্ধির মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় অপ্রস্তুত। তাই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হবে এসব দেশে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রাম্পের জলবায়ুবিরোধী নীতির ফলে ২০৩৫ সালের পর পরবর্তী ৮০ বছরে অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে বিশ্বজুড়ে ১৩ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। আর এর সবই হবে তাপমাত্রাজনিত কারণে। প্রকৃতপক্ষে তাপমাত্রাজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি, তবে শীত-সম্পর্কিত মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসায় মোট হিসাবে কিছুটা ভারসাম্য হতে পারে।

জলবায়ু সম্মেলনে অনুপস্থিত যুক্তরাষ্ট্র

ব্রাজিলের বেলেমে (কপ-৩০) জলবায়ুসংকট মোকাবিলায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশের প্রতিনিধিরা একত্র হলেও যুক্তরাষ্ট্র এই সম্মেলনে যোগ দেয়নি। বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান ২০ শতাংশ! এ কারণে কপ-৩০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে।

যেভাবে হিসাব করা হলো ১৩ লাখ মৃত্যুর পূর্বাভাস

প্রোপাবলিকা ও দ্য গার্ডিয়ান গবেষণায় ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি পরিবর্তনের ফলে অতিরিক্ত কার্বন নির্গমনের পরিমাণ বের করতে রোডিয়াম গ্রুপের (Rhodium Group) মডেল ব্যবহার করেছে। তাদের মধ্যম পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ৫.৭ বিলিয়ন টন কার্বন নির্গমন হবে। এতে বৈশ্বিক তাপমাত্রাজনিত কারণে ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

গবেষণায় ‘মরটালিটি কোস্ট অব কার্বন’ (Mortality Cost of Carbon) নামের একটি স্বীকৃত মেট্রিক ব্যবহার করা হয়েছে। বেন্টলি ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ আর. ড্যানিয়েল ব্রেসলার এটি তৈরি করেছেন। তাঁর গবেষণা অনুযায়ী, একটি মৃত্যু ঘটাতে গড়ে ৪ হাজার ৪৩৪ টন কার্বন নিঃসরণই যথেষ্ট। জীবদ্দশায় ৩.৫ জন আমেরিকান গড়ে ঠিক এ পরিমাণ কার্বন নির্গমন করেন।

ব্রেসলারের মতে, যদি বৈশ্বিক নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে ২১০০ সালের মধ্যে মানবসৃষ্ট তাপমাত্রাজনিত মৃত্যু ৮ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছাতে পারে।

ইফে কিলিমানজারো ইউএস ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘সংখ্যাগুলো ভয়ংকর। কিন্তু এগুলো শুধু সংখ্যা নয়; এগুলো মানুষের জীবন, পরিবারের গল্প, তাদের স্বপ্ন।’

ট্রাম্প প্রশাসনের জলবায়ুবিরোধী সিদ্ধান্তগুলো কী

যুক্তরাষ্ট্রে গত এক বছরে ট্রাম্প প্রশাসন ও রিপাবলিকানদের সহায়তায় জলবায়ুসংক্রান্ত অনেক পদক্ষেপ বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, বৈদ্যুতিক গাড়ি ও উৎপাদন খাতের ট্যাক্স ক্রেডিট কাটা, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দূষণ নিয়ন্ত্রণ শিথিল, সরকারি জমিতে ড্রিলিং সহজ করা, যানবাহনের নির্গমন নিয়ন্ত্রণ বাতিল, তেল-গ্যাস শিল্পে দূষণ সীমাবদ্ধতা প্রত্যাহার ও মিথেন নির্গমন কমানোর উদ্যোগ বন্ধ।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডোয়ের স্কুল অব সাসটেইনেবিলিটির অর্থনীতিবিদ মার্শাল বার্ক বলেন, ‘ট্রাম্পের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী জলবায়ু নীতি কার্যকর হয়েছিল। সেগুলো প্রত্যাহার করা মানে সরাসরি বৈশ্বিক ক্ষতি বাড়ানো।’

তবে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র টেইলর রজার্স দাবি করেন, ‘আমেরিকা বামপন্থীদের ভুয়া জলবায়ু দাবিতে বিশ্বাস করে না। তিনি অবশ্য তাপমাত্রাজনিত মৃত্যুর পূর্বাভাস সম্পর্কে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি।

মানুষ গরমে কীভাবে মারা যায়

চরম তাপে মানবদেহের তাপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ঘাম ঝরা বন্ধ হয়ে যায়, এরপর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অঙ্গ বিকল হওয়া এবং শেষে মৃত্যু ঘটে।

বিশেষ ঝুঁকিতে থাকে—বাইরে কাজে নিয়োজিত শ্রমিক, শিশু, বৃদ্ধ ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা। এ ছাড়া যাদের ঘরে এসি বা তাপ কমানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থার অভাব রয়েছে তারাও ঝুঁকিতে আছে।

ফল কোথায় সবচেয়ে ভয়াবহ?

ব্রেসলারের হিসাব অনুযায়ী, নাইজার ও সোমালিয়াতে মাথাপিছু তাপসম্পর্কিত মৃত্যু সবচেয়ে বেশি হবে। তবে মৃত্যু সবচেয়ে বেশি হবে ভারত। বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশ পাকিস্তানে। সেখানে ৬-৭ শতাংশ মানুষ তাপমাত্রাজনিত কারণে মারা যেতে পারে। বাংলাদেশে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২.১ শতাংশের বাস। এখানে তাপমাত্রাজনিত কারণে ১-২ শতাংশ মানুষ মারা যেতে পারে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় দূষণকারী দেশ হলেও, সেখানে মৃত্যুর হার মাত্র ১ শতাংশ। তবে যুক্তরাষ্ট্রে তাপসংক্রান্ত মৃত্যু ২০০০ সালের পর থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

উল্টো পথে হাঁটছেন ট্রাম্প

গত বছর অর্থাৎ বাইডেন প্রশাসন কয়েক দশকের মধ্যে জলবায়ুনীতিতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু হোয়াইট হাউসে ফিরে প্রথম দিনই ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নেন। এরপর প্রথম ১০০ দিনে তিনি তাঁর আগের মেয়াদের সব জলবায়ুনীতি প্রত্যাহার করেন।

পরিস্থিতি পাল্টাতে কী প্রয়োজন

বেন্টলি ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ আর. ড্যানিয়েল ব্রেসলার বলেন, ‘যদি আপনি নির্গমন বাড়ান, মৃত্যুও বাড়বে। আর নির্গমন কমালে, জীবন বাঁচবে। এ ছাড়া, দেশগুলো কত দ্রুত নির্গমন কমায়, বাজার কীভাবে বদলায় এবং ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টরা কী সিদ্ধান্ত নেন তার ওপরও এটি নির্ভর করবে।’

অর্থনীতিবিদ আর. ড্যানিয়েল ব্রেসলার আরও বলেন, ‘যদি ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী নির্গমন প্রায় শূন্যে নেমে আসে, তাহলে তাপমাত্রাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ২১০০ সালের মধ্যে ৯০ লাখে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবুও চলতি বছরেই ট্রাম্পের নীতি পরিবর্তনের ফলে ৬ লাখ ১৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে।’

ঢাকায় আজ ছুটির দিনে আবহাওয়া কেমন থাকবে জানা গেল পূর্বাভাসে

২১ নভেম্বরের পর ভূমিকম্পে কতবার কাঁপল বাংলাদেশ

বায়ুদূষণে দিল্লিকে হারিয়ে শীর্ষে ঢাকা, খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসে যা করতে হবে

ঢাকার তাপমাত্রা আজও ১৭ ডিগ্রির ঘরে

এবার ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ

শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল, দিনাজপুরে তাপমাত্রা নামল ১১ ডিগ্রিতে

বায়ুদূষণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ঢাকা, দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা দক্ষিণ পল্লবীর

ঢাকার তাপমাত্রা ১৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস

বঙ্গোপসাগরে ফের ভূমিকম্প, উৎপত্তি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে

রাজধানীর বাতাসে বাড়ছে দূষণ, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ইস্টার্ন হাউজিংয়ে