জন্ম বাংলাদেশের খুলনা জেলায়। মাত্র ১৫ বছর বয়সে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি জমান। ছোটবেলা থেকেই ছিল ক্রিকেটপ্রীতি। বাংলাদেশে থাকাকালে খেলেছেন অনূর্ধ্ব–১৩ থেকে ১৫ পর্যন্ত। তাঁর সেই সময়কার সতীর্থদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমানে জাতীয় দলের পেসার তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশ জাতীয় দলের অনেক খেলোয়াড়ের সঙ্গেই তাঁর বেশ ভালো সম্পর্ক। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েই কোরিয়ায় পাড়ি জমান। কিন্তু সেই সার্টিফিকেট তাঁর উচ্চতর শিক্ষার জন্য কাজে দেয়নি সে দেশে। নতুন করে সেখানকার ইমহ্যাক মিডেল স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। স্কুল পেরিয়ে এক বছরের গ্যাপ। কোরিয়ান ভাষাটা প্রথমে রপ্ত করার চেষ্টা করলেন। সেখানকার নাগরিকত্বও পেয়ে যান। সজল নাম পাল্টে রাখা হয়েছে কিম দেই-ইয়ুন।
উচ্চতর শিক্ষার জন্য জুংআং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন সজল। চার বছরের কোর্স শেষ করার মধ্যেই কোরিয়ান ভাষায় পটু হয়ে উঠলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রথম অভিনয় শুরু।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম–বিষয়ক কোর্সের শিক্ষার্থীরা শর্টফিল্ম বানাবেন। সজলকেই পছন্দ করলেন তাঁরা। সেটা ২০১৩ সালের ঘটনা। সিনেমার নাম ‘অশোক’। ওপেন শো করা হলো। সবার কাছ থেকে বেশ প্রশংসা পেলেন অভিনয়ের। তখন থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক আসতে শুরু করে। ওই বছরই প্রথম টিভিতে অভিনয়। অভিনয়ের সুযোগ মেলে কোরিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় ‘রুড মিস ইয়ং আ’ ধারাবাহিকের ১২তম সিজনে। এর পর এই ধারাবাহিকের চার সিজনে পরপর অভিনয় করেন। বর্তমান ব্যস্ততায়ও রয়েছে এই ধারাবাহিক। ২০০৭ সালে শুরু হওয়া এই ধারাবাহিক কোরিয়ার জনপ্রিয় ধারাবাহিকগুলোর অন্যতম। ‘টিভিএন’ চ্যানেলে প্রচারিত এই ধারাবাহিক সেখানে সবচেয়ে দীর্ঘ ধারাবাহিকের মর্যাদা পেয়েছে।
ড্রামাটিতে সজল একজন বিদেশি শ্রমিকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সজল বলেন, ‘এখানে আমার বিশেষত্ব হচ্ছে, আমি প্রবাদবাক্যের মতো কথা বলি। খুব মজা করে। আমাকে দেখানো হয়েছে একজন বিদেশি হয়েও কোরিয়ানদের চেয়ে ভালো কাজ করতে পারি। কোরিয়ান ভাষায় পারদর্শী, কোরিয়ান খাবার খেতে পছন্দ করি। এরকম নানা কিছু আছে আমার চরিত্রে।’
অভিনয়ের পাশাপাশি ক্রিকেটার হিসেবেও বেশ পরিচিত সজল। যদিও সেখানে ক্রিকেটটাই জনপ্রিয় নয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে রাতারাতি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আশা করি একটা সময়ে এ দেশ ক্রিকেটে ভালো করবে এবং জনপ্রিয়তা পাবে এই খেলা। আমাদের এখানে বছরে শুধু একটা লিগ হয়। যেখানে প্রায় সবগুলো টিমই বিদেশি থাকে। একটিমাত্র টিম থাকে স্থানীয়। আমি স্থানীয় টিমে খেলি। গত চার বছরে একবার চ্যাম্পিয়ন ও দুবার রানারআপ হয় আমাদের দল। আমার পারফরম্যান্সেও আমি বেশ তৃপ্ত। আমি অলরাউন্ডার হিসেবে খেলি। ফাস্ট বোলিং করি, এটাই বেশি উপভোগ করি।’
গত কয়েক বছরে বাংলা ভাষাটা প্রায় ভুলতে বসেছেন। এর কারণ হিসেবে সজল বলেন, ‘এখানে অনেক বাঙালি আছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমার সার্কেলের প্রায় সবাই কোরিয়ান। অভিনয় করতে হয় কোরিয়ান ভাষায়। তখন সবার সাথে ওভাবেই থাকতে হয়। তাছাড়া আমার স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরাও প্রায় সব কেরিয়ান। এমনকি গার্লফ্রেন্ডও কোরিয়ান। বাংলা ভাষার চর্চাটা এখন খুবই কম হয়। তাই কিছু কিছু শব্দ ভুলতে বসেছি।’
সর্বশেষ দু বছর আগে বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনা জানাতে গিয়ে বললেন, ‘আসলে আমি তো এখন কোরিয়ারই নাগরিক। তাই জীবন নিয়ে প্ল্যানিংটা এ দেশকে ঘিরেই। তার পরও ভালোবাসা তো আছেই বাংলাদেশের জন্য। দুই বছর আগে যাওয়া হয়েছিল সর্বশেষ। আবার কবে যাওয়া হবে ঠিক নেই। সিরিয়ালটির ব্যস্ততা তো চলছেই। সাথে ক্রিকেট নিয়েও বেশ ব্যস্ততা আছে। নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে হয়। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি। এখন লক্ষ্য ভালো পারফর্ম করা।’
সুদূর কোরিয়ায় থাকলেও বাংলাদেশের সংস্কৃতির কিছু খোঁজ রাখেন। সিনেমা দেখা হয় না। তবে ইউটিউব ঘেঁটে মোশাররফ করিমের নাটক দেখেন। বর্তমানে তাঁর নাটকই সবচেয়ে প্রিয় তাঁর কাছে। এক রকমের ফ্যান বলা যায়।