পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ। ২০০৩ সালে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলায় রামচন্দ্রপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। মায়ের চেষ্টা এবং নিজের লড়াই—দু্ইয়ে মিলেই সফল তিনি।
সাধারণত শিশুরা যেখানে ১০ থেকে ১৪ মাসে হাঁটতে পারে, সেখানে রিয়াদের হাঁটতে সময় লেগেছে আড়াই বছর। নিজের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতিনিয়ত বুলিংয়ের শিকার হতেন তিনি। বাসার পাশে বাঁশেরবাদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু তাঁর। লেখার সময় রিয়াদের হাত কাঁপত বলে ঠিকমতো লিখতে পারতেন না। তবু নিজের চেষ্টায় রিয়াদ জীবনের প্রথম পরীক্ষায় ১০১ জনের মধ্যে মেধাতালিকায় প্রথম হন।
২০১৬ সালে জেএসসি পরীক্ষায় ৪ দশমিক ৬৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন রিয়াদ। ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ৪ দশমিক ১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ৫৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
এরপর আসে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সময়। এ সময় রিয়াদ প্রায় দুই মাস অসুস্থ ছিলেন। ফলে প্রথমবার পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ পাননি তিনি। গুচ্ছ পরীক্ষায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাক্ষাৎকারের ডাক পান। কিন্তু পরিবার না চাওয়ায় যাওয়া হয়নি। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন। এখন সেখানেই লোকপ্রশাসন বিভাগে পড়াশোনা করছেন তিনি।
পড়াশোনার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সলভার গ্রিন এবং পাঠকবন্ধুর সঙ্গে যুক্ত আছেন রিয়াদ। সেই সঙ্গে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত অ্যাসপির ইনস্টিটিউটের লিডার প্রোগ্রামে যুক্ত তিনি। যুক্ত আছেন পাবনা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংগঠনের সঙ্গে।
রিয়াদের ঝুড়িতে ৩০টির বেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সনদ আছে। দক্ষতা অর্জন করা তাঁর একরকম নেশা। তাঁর প্রধান অস্ত্র হলো ইচ্ছাশক্তি এবং নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হলেও হাল ছাড়েননি। রিয়াদ নিজেকে ভিন্নভাবে প্রকাশ করতে চান।
রিয়াদ জানান, জীবনে বেশি অবদান তাঁর মায়ের। পাশাপাশি বাবা ও শিক্ষকেরাও অনেক ভালোবেসেছেন তাঁকে, সহায়তা করেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে পৃথিবীতে নতুন কিছু করার স্বপ্ন তাঁর।