হোম > অপরাধ > রংপুর

সরকারি খাতায় শারীরিক প্রতিবন্ধী সৈকত মণ্ডল

তাসনিম মহসিন, পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে

রংপুরের পীরগঞ্জে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলায় নেতৃত্বদানকারী হিসেবে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) সৈকত মণ্ডল নামের এক কলেজছাত্রের কথা বলছে। যদিও এ ছাত্রলীগ নেতার গ্রামে গিয়ে জানা গেল ভিন্ন তথ্য। তার পরিবারের দাবি, সৈকতের নাম শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি খাতায় রয়েছে।

গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ৩টায় পীরগঞ্জের রামনাথপুরের চেরাগপুর গ্রামের মণ্ডল বাড়িতে সৈকত মণ্ডলের খোঁজ করলে এগিয়ে আসেন তাঁর মা আঞ্জুয়ারা বেগম। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে সৈকতের বাবার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললেন। 

এর পরপরই সৈকতের ৯৪ বছর বয়সী দাদা ও একসময়ের আওয়ামী লীগ কর্মী আবুল হোসেন মণ্ডল, বড় চাচা আবদুর রশিদ মণ্ডল, বাবা রাশিদুল হক মণ্ডল, ছোট চাচা মো. রেজাউল করিমসহ পরিবারের অন্য সদস্য এবং আশপাশের প্রতিবেশীরা জড়ো হতে থাকেন। পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানান। সৈকতের ছোট চাচা মো. রেজাউল করিম সেখানকার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেও জানান। 

সৈকত মণ্ডল সম্পর্কে জানতে চাইলে দাদা আবুল হোসেন মণ্ডল কান্নায় ভেঙে পড়েন। উত্তর জেলেপল্লিতে যা হয়েছে, তার ব্যর্থতা সরকারের জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের সঙ্গে যা হয়েছে, তা নিন্দনীয়। তবে তাদের রক্ষার দায়িত্ব সরকারের, আর উপরে আল্লার।’ 

এ সময়ে সৈকতের বড় চাচা, ছোট চাচা ও বাবা ১৭ অক্টোবর পীরগঞ্জের উত্তর জেলেপল্লিতে হওয়া ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। আবদুর রশিদ মণ্ডল বলেন, ‘আগুন দেওয়ার সময়ে সৈকত চেয়ারম্যানের সামনে, তাঁর সঙ্গেই ছিল। আমরা তার অপরাধের কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।’ 

 ১৭ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টকে কেন্দ্র করে পীরগঞ্জের বড় করিমপুর গ্রামের জেলেপল্লিতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। আগুন দেওয়া হয় ২৪টি হিন্দু পরিবারের বসতঘরে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এ ঘটনায় রংপুরের পীরগঞ্জ থানায় তিনটি মামলা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেওয়া তথ্যমতে, এ হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সৈকত। তবে পরিবারের দাবি, সৈকত শারীরিক প্রতিবন্ধী। 

এ বিষয়ে সৈকতের মা আঞ্জুয়ারা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাবা আমার ছেলেটা শারীরিক প্রতিবন্ধী। ও বাচ্চা ছেলে। অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা শিখিয়ে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। কম্পিউটারে ভর্তি করেছি। আমার ছেলে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে। এখন তাকে জামাত-শিবির বানানো হচ্ছে। সারা জীবন নৌকা (আওয়ামী লীগ) করে, এখন আমাদের নৌকা থেকে ফেলে দিচ্ছে।’ 

সৈকতের কী ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধিতা রয়েছে, জানতে চাইলে আঞ্জুয়ারা বেগম সমাজসেবা অধিদপ্তরের দেওয়া রংপুরে নিবন্ধিত ৪৮৫৭ নম্বরের পরিচয়পত্রের কাগজ নিয়ে আসেন, যা ২০১৫ সালে ২৬ আগস্ট ইস্যু করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ ইস্যু করা আইডি কার্ডও নিয়ে আসেন তিনি। তিনি বলেন, আমার ছেলেটার জন্ম থেকে হাতে ও পায়ের আঙুলে সমস্যা। 

যদিও গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত শুক্রবার রাতে টঙ্গী থেকে গ্রেপ্তার হওয়া সৈকত ও রবিউল ইসলাম পীরগঞ্জে হামলার অন্যতম হোতা। তিনি বলেন, সৈকত তাঁর ফেসবুক পেজে বিভিন্ন ছোট-বড় ইস্যুতে উসকানিমূলক পোস্ট দিতেন। মূলত কুমিল্লার ঘটনার পর থেকেই তিনি ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে আসছিলেন। পীরগঞ্জে যখন একটি ঘটনা ঘটে, তখন সৈকত একের পর এক উসকানিমূলক পোস্ট দিতে থাকেন। মূলত তাঁর এসব পোস্ট দেখেই পীরগঞ্জে শত শত লোক জড়ো হয়েছিল। আগুন দেওয়ার ঘটনায় ঘটনাস্থলে ছিলেন সৈকত। তিনি সবাইকে উত্তেজিত করেন আগুন দেওয়ার জন্য। তাঁর নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন হামলায় সরাসরি অংশ নিয়ে বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। গ্রেপ্তার রবিউলকে মাইকিং করে লোকজন জড়ো করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন সৈকত। 

সৈকতের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই দিন খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘তিনি রংপুরের একটি কলেজের শিক্ষার্থী। রংপুরে ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে নিজে প্রচার করতেন। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা আমরা পাইনি।’ 

র‍্যাব সৈকতের তেমন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না পেলেও তাঁর মা কারমাইকেল কলেজ শাখার দর্শন বিভাগের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কমিটির কাগজ দেখালেন। সেখানে সৈকতের নাম সহসভাপতি হিসেবে রয়েছে। অবশ্য কারমাইকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ জানিয়েছে, সৈকতকে হামলার পরদিনই বহিষ্কার করা হয়েছে। 

র‍্যাবের পক্ষ থেকে সৈকতের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ধর্মীয় উসকানির। বিষয়টি জানালে সৈকতের বাবা রাশিদুল হক মণ্ডল ও মা আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘ফেসবুকের কারণে সৈকতকে ধরলে প্রতিদিন আরও যারা কুকর্ম করছে, সবাইকে ধরতে হবে।’ 

সৈকত যদি কোনো অপরাধ না করে থাকে তাহলে পীরগঞ্জ থেকে কেন পালাল—জানতে চাইলে সৈকতের মা বলেন, ‘এখানকার চেয়ারম্যান মো. ছাদেকুল ইসলাম সাদেক আমাদের মামাশ্বশুর। ঘটনার পরদিন রাতে বাসার আশপাশ দিয়ে অনেক প্রশাসনের লোক ঘোরাফেরা করছিল। বাসায় কয়েকবার এসে ধাক্কাধাক্কি করে গেছে। এ সময়ে চেয়ারম্যানের কাছে ফোনে করণীয় জানতে চাইলে তিনি গা-ঢাকা দেওয়ার পরামর্শ দেন।’ তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সৈকতের খোঁজ তাঁরাই দিয়েছেন। এ সময় সৈকতের বাবা রাশিদুল হক মণ্ডল ও মা আঞ্জুয়ারা বেগম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন, তুলে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া ও ভয়ভীতি দেখানোর ঘটনার বিস্তারিত বলেন।’ 

সৈকতের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দূরসম্পর্কের আত্মীয়তার কথা জানান ১৩ নম্বর রামনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছাদেকুল ইসলাম সাদেক। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘সৈকতের বিষয়ে কোনো কথা বলব না। জনপ্রতিনিধি হলে বিভিন্ন ধরনের মানুষ আসে। এখন খারাপ মানুষকে সুবিধা দিচ্ছি কি না, সেটা দেখতে হবে। হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’ 

কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন করতে দেব না, এটা আমাদের অঙ্গীকার: মির্জা ফখরুল

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

ভূরুঙ্গামারীতে বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষ, যুবক নিহত

ফুলবাড়ীতে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

পঞ্চগড়ে চার দিন ধরে ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীত

ফুলবাড়ীতে ট্রলির চাপায় সহযোগী নিহত

কাউনিয়ায় কিশোরীকে ধর্ষণচেষ্টা, যুবক গ্রেপ্তার

বিশেষ ট্রেনের দাবিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের রেলপথ অবরোধ, ছেড়ে যায়নি লালমনি এক্সপ্রেস

কাউনিয়ায় মহাসড়কে ঝরল দুই কৃষকের প্রাণ

রংপুর-৩ আসনে জি এম কাদেরের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ