গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের পূর্ব ছাপড়হাটী (বামনটারী) গ্রামে ১০ পরিবারের প্রায় অর্ধশত লোক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের চলাচলের রাস্তায় স্থানীয় প্রভাবশালী প্রদীপ কুমার রায় বাবলু বাঁশের বেড়া দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
অবরুদ্ধ এক পরিবার প্রধান মানিক চন্দ্র বলেন, ‘মোর কোলের ছাওয়া রাধা রানি। বয়স তার দুই। গত চার দিন থাকি খুবই অসুস্থ সে। চিকিৎসককে ফোন করছিনু মুই। বাড়ির সামনে বেড়া দেওয়া। আইসপার না পায়য়া তাই ছাওয়া না দেখি চলি গেইছে। ছাওয়ার অবস্থা খুব খারাপ।’
এ বলেই হাউমাউ করে কাঁদেন মানিক। শুধু তিনি একা নন। এ রকম দশা আরও নয় পরিবারের। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই গ্রামের রিবতী কুমার রায় বিজয় ও তাঁর চাচাতো ভাই বাবলুর সঙ্গে দীর্ঘদিন জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। পরে নিষ্পত্তি হলে বাবলু জমি ফেরত পান। এরপর তিনি সেই জমিতে থাকা দীর্ঘদিনের রাস্তাটি বাঁশ দিয়ে বন্ধ করেন। এতে ওই দরিদ্র ১০ পরিবার বাড়িবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এলাকাবাসী বলেন, এসব পরিবারের সঙ্গে বাবলুর শত্রুতা নেই। তবে শুনেছি মামলা চলাকালে সেসব পরিবারের লোকজন বিজয়ের পক্ষে ছিলেন। সে কারণে হয়তো বাবলু তাদের যাতায়াতের রাস্তাটি বন্ধ করেছেন। তবে এটি অমানবিক উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, দ্রুত রাস্তাটি খুলে দেওয়া দরকার। সেটি খুলে দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদনও করা হয়েছে। তিনি ইউপি চেয়ারম্যানকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সমাধান করতে না পেরে ফেরত চলে যান উনি।
আবেদন সূত্রে জানা যায়, বাপ-দাদার আমল থেকে রাস্তাটি ব্যবহার করে আসছিল ওই ১০ পরিবার। হঠাৎ সেটি বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করেন বাবলু ও অপু কুমার রায়। ফলে বিকল্প না থাকায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন অর্ধশত লোকজন। ওই রাস্তা কেউ খুলতে গেলে তাঁকে মারধর করাসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
বাবলু এ বিষয়ে বলেন, ‘ওই জমিতে বিরোধ ছিল। দীর্ঘদিন মামলায় লড়ে সেটি পেয়েছি। এতে আমার অনেক খরচ হয়েছে। আমি গরিব। কাজেই আমার জমি দিয়ে রাস্তা দেওয়া সম্ভব নয়।’
ছাপড়হাটী ইউপি চেয়ারম্যান কনক কুমার গোস্বামী বলেন, ‘ইউএনও স্যারের নির্দেশনা পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বাবলু ও তাঁর স্ত্রী আমাকে অপমান করেছেন। কোনো সমাধান করতে পারিনি।’
ইউএনও মোহাম্মদ-আল-মারুফ বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলাম। তিনি সমাধান করতে পারেননি। বিষয়টি দ্রুত সুরাহার ব্যবস্থা করছি।’