রংপুরের পীরগাছায় চাঞ্চল্যকর শিশু রিয়া মনি (৭) হত্যার দায়ে দুই আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে-২ এর বিচারক মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ওই মামলার আরও ৫ আসামিকে খালাস দেন বিচারক।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের পরান গ্রামের আবুল কালামের ছেলে রাসেল মিয়া (২২) ও ওই গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে সালাউদ্দিন তালুদ (২০)। রায় ঘোষণার সময় রাসেল মিয়া আদালতে উপস্থিত থাকলেও সালাউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছেন।
মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের পরান গ্রামের আব্দুর রহিমের শিশু কন্যা স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিকেলে বাড়ির সামনে রাস্তায় প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করছিল। এ সময় সেখান থেকে তাকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়। এরপর রিয়া মনির বাবার কাছে মোবাইলে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দুর্বৃত্তরা।
এদিকে, মেয়েকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে প্রথমে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও পরবর্তীতে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন রিয়ার বাবা আব্দুর রহিম।
মামলার সূত্র ধরে ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি রাসেলকে গ্রেপ্তারসহ তাঁর কাছ থেকে একটি মোবাইল উদ্ধার করে পুলিশ। পরে রাসেলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তারসহ মুক্তিপণ চাওয়ার জন্য ব্যবহৃত মোবাইল ও রিয়াকে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো জুসের বোতল উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে ২৬ দিন পর রাসেল তালুকদারের বাড়ি সংলগ্ন আব্দুল হক মিস্ত্রীর টয়লেট থেকে রিয়া মনির বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
তবে মামলার এজাহারে রাসেল মিয়া ও সালাউদ্দিনের নাম না থাকায় তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২২ জুনে ওই দু'জনসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাইদুর রহমান। দীর্ঘ ৭ বছরের বেশি সময় ধরে মামলার বিচারকাজ চলাকালে ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আজ এ রায় ঘোষণা করেন বিচারক। অপরদিকে, রায়ে আবুল কালাম, তাঁর স্ত্রী জহিরণ বেগম, আবু জাফর জুয়েল, নয়ন মিয়া ও সাগর মিয়ার নামে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বিচারক তাঁদের খালাস করে দিয়েছেন।
রায় সম্পর্কে বাদী আব্দুল রহিম অসুস্থ থাকায় তাঁর ছোট ভাই নুর হোসেন বলেন, যে বাড়িতে রিয়া মনিকে হত্যা, মরদেহ উদ্ধার ও আলামত উদ্ধার করা হল সেই বাড়ির আসামিরা খালাস পেলেন। আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। রায়ের কপি পেলে উচ্চ আদালতে যাব।
রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন বলেন, বাদীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।