হোম > অপরাধ > ময়মনসিংহ

কিশোরী ফুটবলারকে ধর্ষণ: এমপি তুহিনের ঘনিষ্ঠ হওয়াতেই বেপরোয়া ফয়সাল

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

কিশোরী ফুটবলারকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন নান্দাইল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম ফকির ফয়সাল। এর আগে আওয়ামী লীগ নেতা মুনসুর ভুইয়া হত্যা মামলাসহ ফয়সালের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। নান্দাইলে সন্ত্রাসী হিসেবেই পরিচিত তিনি। 

অভিযোগ রয়েছে, ময়মনসিংহ-৯ নান্দাইল আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিনের প্রশ্রয় পেয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ফয়সাল। এমপির ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাঁকে সবাই সমীহ করে চলেন। 

সম্প্রতি কিশোরী ফুটবলারকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর এমপি তুহিন মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় ফয়সাল ক্ষুব্ধ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমপিকে নিয়ে নানা কথা বলেছেন তিনি। 

ওয়াহিদুল আলম ফকির ফয়সাল পৌর শহরের পাছপাড়া গ্রামের লাল মিয়া ফকিরের ছেলে। তাঁর বাবা সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর। এসএসসি পাস করে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়ান ফয়সাল। এইচএসসি পাসের পর বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। সক্রিয় হন রাজনীতিতে। ২০১৩ সালে নান্দাইল উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন হাফিজুর রহমান রিপন এবং সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম ভুইয়া সোহেল। 

 ২০১৪ সালে আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন এমপি নির্বাচিত হয়ে ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন এবং পছন্দের লোক হিসেবে ফয়সালকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি করেন। 

কমিটিতে নতুন পদ এবং এমপির আশ্রয় প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন ফয়সাল। ওই বছরেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মুনসুর ভুইয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলার আসামি হন। এরপর থেকে তাঁর অপরাধ প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। 

 ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি দ্রুত বিচার আইনে, ২০১৮ সালের ২৪ জুন দ্রুত বিচার আইনে এবং ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর মারামারির মামলায় আসামি করা হয় ফয়সালকে। এ ছাড়া এলাকায় আরও অনেক অপকর্মে তাঁর নাম উঠে এসেছে। কিন্তু এমপির লোক হওয়ায় কেউ মুখে খোলার সাহস পায়নি। 

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম ভুইয়া সোহেল বলেন, ‘২০১৩ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। সেই পদটিতে সাত থেকে আট মাসের মতো দায়িত্বে ছিলাম। ২০১৪ সালে নতুন কমিটি করা হয়। সেখানে সাধারণ সম্পাদক হয় ফয়সাল ফকির। সে এমপি মহোদয়ের কাছের মানুষ। তবে আমিও দূরের না। ব্যক্তিগত কারণেই আমি কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছিলাম।’ 

ফয়সালের চাচা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাজহারুল ইসলাম ফকির বলেন, ‘এমপি তুহিন ফয়সালকে রাজনীতিতে সক্রিয় করেন। উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বানান। যার কারণে তার পড়াশোনাও আর হয়নি। সব সময় এমপির সঙ্গে তার চলাফেরা ছিল। সেখান থেকেই তার খারাপ পথে যাওয়া। তার কর্মকাণ্ডে আমরাও বিব্রত। কিশোরী ফুটবলার ধর্ষণ নিয়ে একেক জন একেক কথা বলছে। আমি শুনেছি মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টার পাশাপাশি মারধর করা হয়েছিল।’ 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, ‘এমপির ডান হাত ফয়সাল। তাকে সবাই সন্ত্রাসী হিসেবেই জানে। এমপির প্রভাব খাটিয়ে এমন কোনো অপকর্ম নেই যে সে করেনি। আমার ভাই আবুল মুনসুর হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ফয়সাল। একটা খুনিকে কীভাবে এমপি শেল্টার দেয় তা বোধগম্য নয়।’ 

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ-৯ নান্দাইল আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন বলেন, ‘নান্দাইলে কিশোরী ফুটবলারদের উত্থান, সেটা আমার জন্য হয়েছে সকলেই জানে। যখন শুনি আমার একটা মেয়ের সঙ্গে এমন হয়েছে, তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। আমি মেয়েটির সঙ্গে প্রথমে কথা বলেই বুঝতে পেরেছিলাম সে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কিন্তু মেয়েটি পরিষ্কার করে কিছু না বলায় ধর্ষণ চেষ্টার মামলা হয়। পুলিশ আন্তরিকভাবে আসামি ধরার জন্য কাজ করেছে। আমিও সহযোগিতা করেছি পুলিশকে। যার জন্য ফয়সাল আমার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়েছে।’ 

রাজনীতিতে ফয়সালের উত্থান তো আপনার হাত ধরেই-এর জবাবে এমপি বলেন, ‘আমি এমপি হওয়ার আগে থেকেই সে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। আমি এমপি, আমার কাছের মানুষ সবাই, সেটা স্বাভাবিক।’ 

ফুটবলার কিশোরীকে ধর্ষণের আগেও ফয়সালের বিরুদ্ধে চারটি মামলা ছিলেন এবং তিনি আপনার নামে প্রভাব খাটাতেন-এমন প্রশ্নে এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন ‘এসব অবান্তর’, এ কথা বলেই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। 

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, ‘মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় একজন এসআইকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। যেহেতু শুরু থেকেই থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেহেতু মামলাটি ডিবিকে তদন্ত করার জন্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে ওসির কোনো গাফিলতি থাকলে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

গত শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ওই কিশোরী ফুটবলার বাদী হয়ে ফয়সাল ও তাঁর দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের অভিযোগ করেন। তবে, গত সোমবার (২৫ এপ্রিল) পুলিশ ধর্ষণ মামলা রুজু না করে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা নেয়। 

গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই কিশোরীর ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়। পরে আদালতে জবানবন্দি দেয় মেয়েটি। 

গত বুধবার (২৭ এপ্রিল) গাজীপুরের গাছা থানা এলাকা থেকে নান্দাইল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়সালকে গ্রেপ্তার করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে বিচারক দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক এমপি সারোয়ারের জামিন নামঞ্জুর

দুর্গাপুরে বড়দিন উপলক্ষে ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত

ময়মনসিংহে হোস্টেল থেকে কলেজছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার

ঈশ্বরগঞ্জে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত ১১

দীপু দাসের পরিবারের পাশে শহীদুল আলমসহ ১৮ মানবাধিকারকর্মী

ময়মনসিংহে নিহত দীপুর বাড়িতে জেলা প্রশাসক, স্ত্রীকে চাকরির আশ্বাস

পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহে আগুন: গ্রেপ্তার ১২ আসামির ৩ দিন করে রিমান্ড

নড়বড়ে বাঁশে ঠেস দেওয়া ৪৮০ ভোল্টের খুঁটি

বিস্ফোরক মামলায় সাবেক এমপি সারোয়ার কারাগারে

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহে আগুন: আরও ২ আসামি গ্রেপ্তার