মহাসড়কে সাধারণত যাত্রীবাহী বাস টার্গেট করে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এবার যাত্রীবাহী বাস ব্যবহার করে পণ্যবাহী ট্রাকে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের একটি চক্রকে ধরেছে র্যাব। চক্রের সদস্যরা একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে হাজতবাস করলেও বের হয়ে একই কাজে ফিরেছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ২৫ হাজার ডিমবাহী একটি পিকআপ ভ্যানে ডাকাতিকালে চক্রের ছয় সদস্যকে আটক করেছে র্যাব। এ সময় ডাকাতির কাছে ব্যবহৃত বাস ও দেশীয় অস্ত্রসহ ও দুই ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
আটককৃত হলেন—ডাকাত চক্রের সরদার মুসা আলী (৪০), নাঈম মিয়া (২৪), শামিম (৩৫), রনি (২৬), আবু সুফিয়ান (২০), ও মামুন (২৪)।
র্যাব বলছে, গার্মেন্টসকর্মী, গাড়িচালক, হেলপার ও রাজমিস্ত্রিসহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে থেকে দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছিলেন তাঁরা।
আজ শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তার ডাকাত সদস্যরা র্যাবকে জানিয়েছে, যুব কল্যাণ এক্সপ্রেস লিমিটেডের একটি বাস নিয়ে ডাকাতি করতে বের হন তাঁরা।
জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, যুব কল্যাণ এক্সপ্রেস লিমিটেডের একটি বাস নিয়ে ভূলতা থেকে রূপসী যাওয়ার পথে এশিয়ান হাইওয়েতে ডিমবাহী পিকআপ ছিনতাই করতে পিছু নেন তাঁরা। ভূলতা-রূপসী সড়কে পিকআপটিকে বাস দিয়ে গতিরোধ করা হয়। এরপর পিকআপ চালক ও তাঁর সহকারীকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পিকআপটির নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। পরে তাঁদের হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে বাসে তুলে নেওয়া হয়।
এরপর ডাকাত দলের সরদার মুসা ও তাঁর প্রধান সহকারী নাঈম পিকআপটি নিয়ে গাউছিয়া-মদনপুরমুখী রাস্তায় নিয়ে যান। ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা পিকআপের চালক ও হেলপারকে তাঁদের বাসে করে মদনপুরের দিকে নিয়ে যান।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চালক ও হেলপারকে উদ্ধারে র্যাবের দল মদনপুর পৌঁছায়। আটকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে যুব কল্যাণ এক্সপ্রেস লিমিটেডের বাসটি জব্দ করা হয়। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে চারজনকে আটক করা হয়। এ সময় আরও কয়েকজন পালিয়ে যায়। বাসের ভেতর থেকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় পিকআপ চালক ও তাঁর সহকারীকেও উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে কমান্ডার মঈন জানান, ১০ থেকে ১২ জনের সংঘবদ্ধ এই ডাকাত দল বেশ কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিত ডাকাতি করে আসছিল। তারা পেশায় কেউ গার্মেন্টসকর্মী, কেউ গাড়িচালক, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রি ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার।
জিজ্ঞাসাবাদে মুসা জানান, তিনিই এই চক্রের মূল হোতা। গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা তার নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে। তাঁর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। জেলও খেটেছেন।
আটক শামিম মুসার প্রধান সহযোগী এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাসের চালক। ২০০৬ সালে স্ত্রীর হত্যার দায়ে সাত বছর কারাভোগ করেছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাস এই চক্র কীভাবে কোথা থেকে পেল? এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘চক্রটি বাস মালিকের কাছ থেকে দেড় বছর যাবৎ ভাড়া নিয়ে আসছে। ভাড়া নিয়ে ডাকাতি করত তারা। বাস মালিক এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। বাসের কাগজপত্রও সব ঠিক আছে।’