৯৫ বছর বয়সী অসুস্থ পিতাকে উঠানে ফেলে রেখেছেন বিত্তশালী সন্তানেরা। এই বৃদ্ধকে বাইরে পড়ে থাকতে দেখে প্রশাসনকে জানায় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দুজন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাজিব হোসেন ও রাসেল ইকবাল ঘটনাস্থলে যান। ম্যাজিস্ট্রেটদের সামনেও বৃদ্ধ শফিকুল ইসলামকে ঘরে তুলতে ছেলেরা অপারগতা প্রকাশ করলে বড় মেয়ে সুরাইয়া আক্তার বাবাকে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে করে অসুস্থ শফিকুলকে সুরাইয়ার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আজ শুক্রবার সকালে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেঘনা রোডে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার চেয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানায়, অসুস্থ শফিকুলের ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্ত্রীর মৃত্যুর পর একা হয়ে পড়েন শফিকুল ইসলাম। এর দুই বছর আগে তিনি সন্তানদের সব সম্পত্তি ভাগ করে দেন। তাঁর এক ছেলে বর্তমানে বিজিবিতে কর্মরত। তাঁর নাম জাহাঙ্গীর আলম। শাহ আলম নামে আরেক ছেলে সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত। এ ছাড়া আলমগীর হোসেন বিদেশে থাকেন, বর্তমানে ছুটি নিয়ে দেশে রয়েছেন। আরেক ছেলে মারা গেছেন। জীবিত তিন ছেলেই প্রতিষ্ঠিত, লক্ষ্মীপুর পৌর ১ নম্বর ওয়ার্ডে সবারই বিলাসবহুল বাড়ি আছে। এত কিছুর মাঝেও ঘরে ঠাঁই হলো না বৃদ্ধ বাবা শফিকুল ইসলামের। বাবার পরিচর্যা করতে অপারগতা প্রকাশ করলেন তাঁদের সবাই।
এ প্রসঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবাল বলেন, বৃদ্ধ লোকটি অসুস্থ হওয়ায় কোনো ছেলে রাখতে চাচ্ছে না। তাই তাঁরা বাড়ির বাইরে ফেলে রেখেছেন। পরে অসুস্থ শফিকুলের এক মেয়ে এসে তাঁকে নিতে ইচ্ছা পোষণ করেন। আমরা আমাদের ব্যবস্থাপনায় তাঁকে মেয়ের বাড়ি দিয়ে আসি।
শফিকুলের ছেলে শাহ আলম বিপু (সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত) ও আলমগীর হোসেন জানান, পারিবারিক বিরোধের কারণে বাবার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। এটার জন্য ক্ষমা প্রার্থী। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড আর হবে না।
সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মামুনুর রশিদ জানান, পারিবারিক বিরোধে বৃদ্ধ শফিকুল ইসলামের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। তাঁকে ঘর থেকে বের করে উঠানে ফেলে রাখা হয়, যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও অপরাধ। বিকেলে সন্তানদের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। ভবিষ্যতে শফিকুল ইসলামের সঙ্গে আর কোনো ছেলে এ ধরনের অপরাধ করলে পিতা-মাতার ভরন-পোষণ আইন অনুযায়ী কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।